যুক্তরাজ্যে সমাবেশে শেখ হাসিনার ভাষণ নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
শেখ হাসিনা লন্ডনে এক বিশাল জনসভা করবেন। রবিবার (৮ ডিসেম্বর) এই জনসভায় উপস্থিত থাকার জন্য প্রকাশিত আমন্ত্রণপত্র এবং পোস্টারে তাকে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি দেশে ফিরেননি। চার মাস পর রবিবারের জনসভাটি শেখ হাসিনার দ্বিতীয় জনসভা, যা যুক্তরাজ্যের আওয়ামী লীগ আয়োজিত। লন্ডনের ইম্প্রেসন ইভেন্টস ভেন্যুতে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। এর আগেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল সভায় ভাষণ দিয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই জনসভায় শেখ হাসিনা নিজেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেবেন। সভার পোস্টারে তাকে এই পদে উল্লেখ করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, হাসিনা দাবি করেছিলেন যে তিনি এখনো বাংলাদেশের সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি পদত্যাগ করিনি। আমি এখনো সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। রক্তপাত এড়াতে আমি চাপের মুখে দেশ ছেড়েছি।
তার এই দাবির পর, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জানিয়েছিলেন, তিনি হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখেননি এবং মন্ত্রিসভার সচিবের কাছেও তার কপি নেই। রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যের পর, হাসিনা তার পদত্যাগ না করার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সাংবিধানিক দিক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পক্ষে এটি একটি জটিল প্রশ্ন হতে পারে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, ইউনূস সরকার দেশের অস্থিরতা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং হাসিনা ও তার দলকে বাংলাদেশের মাটিতে অস্তিত্বহীন করতে এক তরফা অভিযান চালাচ্ছে। এদিনই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকালের চার মাস পূর্ণ হবে। এই সময়ে, আওয়ামী লীগ কোনো সভা বা সমাবেশ আয়োজন করতে পারছে না এবং ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় হাসিনার ভাষণ নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ইউনূস সরকারের আর্জিতে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ করেছে যে হাসিনা বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ দিচ্ছেন, বিশেষ করে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন। তার পূর্ববর্তী ভাষণের পর বাংলাদেশে মিডিয়া থেকে এসব বক্তব্য সরিয়ে নিতে হয়েছে।
তবে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবারও দুটি সভায় ভাষণ দেবেন। সেই সভাগুলোতে উপস্থিত থাকবেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি মায়ের সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসব সভায় জয়কেও তাঁর পূর্বের সরকারি পরিচয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এছাড়া, লন্ডনের জনসভায় শেখ হাসিনা অবৈধ এবং অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের পদত্যাগের দাবি, মিথ্যা ও বানানো মামলার প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত নিরীহ মানুষদের মুক্তির দাবি জানাবেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে এখন এই জনসভা ও এর বক্তব্য নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও তিনি আরো দুটি সমাবেশে ভাষণ দেবেন, যা তার রাজনৈতিক অবস্থানকে আরো দৃঢ় করতে পারে।