ড. ইউনূসের ভাষণ নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:২০ পিএম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়া-রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন।
রবিবার (২৫ আগস্ট) জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন ভাষণের জবাবে সোমবার (২৬ আগস্ট) এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোনো পুলিশি রাষ্ট্র পরিণত না করতে পারে, তার ব্যবস্থা নেয়া হবে’। আমরাও সেটা চাই। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিলে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। আমাদের ছেলেদের গুলি করে মারা হবে-এটা আর দেখতে চাই না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে।
ড. ইউনূসের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রায় ৬০ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। পত্রিকায় দেখলাম প্রধান উপদেষ্টার মামলা ওঠানো হয়েছে। আরেকজন উপদেষ্টার মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। আমরা চাই আমাদের ১ লাখ ৪৫ হাজার মামলা অবিলম্বে তুলে নিতে হবে। আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা একটি রোডম্যাপ দেবেন। কিন্তু তার মুখ থেকে সেটা শুনতে পাইনি।
সংস্কার করতে পুলিশ ও ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে, প্রধান উপদেষ্টার এমন প্রতিশ্রুতির জবাবে তিনি বলেন, এটা ভালো কথা। আইজিপিও বলেছেন, পুলিশকে জনগণের পুলিশ তৈরি করা হবে, আইডিয়াল পুলিশ। আমরা দ্রুত এটাও চাই। এখনো একটা জিনিস ধোঁয়াশা, যেটা আমার পরিষ্কার করা হয়নি। যেটা আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ দেবেন, গণতন্ত্রের পথে কিভাবে যাবেন, তা কিন্তু আমরা পাইনি। সংস্কারের কথা বলেছেন, কিন্তু কোন কোন খাতে সংস্কার আনবেন, সে ব্যাপারে কিছু আভাস দিয়েছেন। আমি জানি, এত অল্প সময়ে সেটা সম্ভব নয়। তারপরও একটা ধারণা দিলে, ধারণা করতে পারতাম যে ভালোর দিকে যাচ্ছে। ভালোর দিকে যাক এটা আমাদের প্রত্যাশা।
আরো পড়ুন : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি, বললেন ফখরুল
আনসারদের সচিবালয় ঘেরাও এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, রবিবার (২৫ আগস্ট) সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার সদস্যদের পোশাক ব্যবহার করে একটা গোলযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ছাত্ররা সেটা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটা কিন্তু অশনিসংকেত। অর্থ্যাৎ যারা পরাজিত শক্তি তারা চায় বিভিন্নভাবে এই বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য। আমরা জনগণকে আহ্বান জানাবো এই বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় না দেয়ার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সচিবালয়ে আনসারদের ঘেরাও কর্মসূচি ও পরে গোলযোগ তৈরির চেষ্টা এটা অশনিসংকেত। যারা পরাজিত তারা এখনও চক্রান্ত করছে, বিজয়কে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যখন ফ্যাসিবাদ ছিল, তখন তো দাঁড়াবার কথাও চিন্তা করেননি। সময় দিন নতুন সরকারকে, তারা নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবে। সচিবালয় ঘেরাও করে কোনো কিছু আদায়ের চেষ্টা করবেন না, জনগণ ভালো চোখে দেখবে না।
তিনি বলেন, দেশে সব পরিবর্তন এনেছে ছাত্ররা। আমি শিক্ষক হিসেবে আহ্বান জানাতে চাই, অযথা বলপ্রয়োগ করে কোনো কিছু করবেন না। প্রশাসনে এখনো সেই সমস্ত ব্যক্তিকে দেখছি, যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে মদদ দিয়েছে, হত্যায় সহযোগিতা করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ মানুষদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে দিতে হবে। অনতিবিলম্বে দেশপ্রেমিক মানুষকে নিয়ে সরকার চালাতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, আমরা প্রশাসনে এখনো সেই সব ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছি- যারা ফ্যাসিবাদী সরকারকে মদদ দিয়েছে, সাহায্য করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের চেহারা দেখতে চাই না। আবারো বলছি, অতি দ্রুত এদের অপসারিত করে দয়া করে দেশপ্রেমিক, যারা কাজ করতে চায়, যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদেরকে নিয়ে এসে প্রশাসনকে চালু করুন। এটা না করলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।