আশায়-আশঙ্কায় ৩৬ ওয়ার্ড

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৩৫ এএম

‘আমরা রাজধানীতে থাকি। কিন্তু রাজধানীর সুযোগ-সুবিধার ছিঁটেফোঁটাও পাই না। আগে ছিলাম ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা। এখন হয়েছি সিটি করপোরেশনের। পরিবর্তন বলতে এটুকুই। রাজধানীর মূল অংশে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, বর্ধিত অংশে তেমনটি হয়নি। এখনো আমরা ঠিকমতো গ্যাস-পানি পাই না। পয়ঃনিষ্কাশনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অনেক রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। মশার উপদ্রব বেশি, ওষুধও ছিঁটানো হয় না। ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে যেখানে সেখানে। ড্রেনের পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি উপচে পড়ে রাস্তায়। ফলে নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয় শিশুরা। অথচ ট্যাক্স দিতে হচ্ছে নিয়মিত।’
এভাবে বলছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া শ্যামপুরের নতুন ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জহিরুল হক। তবে তিনি স্বীকার করেন, ইউনিয়নের আওতায় থাকাকালে এই এলাকার মানুষ যে ভোগান্তি পোহাতো; সিটি করপোরেশনের আওতায় আসার পর তার কিছুটা লাঘব হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার আওতা পাওয়ার কথা, গত ৯ মাসে তা খুব একটা হয়নি। ফের ভোট এসেছে। এখন তাদের প্রত্যাশা নতুন মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে তাদের এলাকার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেবেন। তারাও সেভাবেই নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে চান। তবে দক্ষিণের ওয়ার্ডগুলোতে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করার কথাও স্বীকার করেন এই বাসিন্দা।
২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আশপাশের ৮টি করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যোগ করা হয়। পরবর্তীতে এই ইউনিয়নগুলোকে নতুন ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের শ্যামপুর ইউনিয়নকে ৫৮ ও ৫৯, দনিয়াকে ৬০, ৬১ ও ৬২, মাতুয়াইলকে ৬৩, ৬৪ ও ৬৫, সারুলিয়াকে ৬৬, ৬৭ ও ৬৮, ডেমরাকে ৬৯ ও ৭০, মান্ডাকে ৭১ ও ৭২, দক্ষিণগাঁওকে ৭৩ ও ৭৪ ও নাসিরাবাদকে ৭৫নং ওয়ার্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তরে যুক্ত হওয়া ৮টি ইউনিয়ন ভেঙে ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাড্ডা ইউনিয়ন ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ভাটারাকে ৩৯ ও ৪০ ওয়ার্ড, সাঁতারক‚লকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, বেরাইদকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড, ডুমনিকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তরখানকে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, দক্ষিণখানকে ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এবং হরিরামপুরকে ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়।

ডিএনসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিপ্লব বলেন, ১৬ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করে আসছি। কিন্তু এলাকার রাস্তাঘাট খুব একটা ভালো নয়। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে বাড্ডা মূল সড়কে যেতে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্ষাকালে তো অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। গত বছর মার্চে শেখ সেলিম কাউন্সিলর হয়েছেন, নির্বাচিত হওয়ার আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে এলাকায় খুব একটা পাওয়া যায়নি। তেমন একটা উন্নয়ন কাজও হয়নি। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে। ভোরের কাগজকে শেখ সেলিম জানান, মাত্র ৯ মাস সময় পেয়েছি। এই অল্প সময়ে আমরা বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। কিছু এলাকায় রাস্তার কাজও শুরু করেছি। আবার ভোট এসেছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি যদি কাউন্সিলর হতে পারি। আগামী ২ বছরে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারব। ইউনিয়ন থাকাকালীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের খুব একটা উন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে গত ৯ মাসে হয়েছে।
মাতুয়াইলের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফের আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম খান। তিনি ভোরের কাগজকে জানান, কয়েক মাসে বেশকিছু রাস্তার কাজ হয়েছে। এখনো কিছু রাস্তার কাজ চলছে। এইসব এলাকা এক সময় খুবই অবহেলিত ছিল। এখন উন্নয়নের ছোঁয়া অনেকটাই লেগেছে। আগামী দিনে আরো উন্নত হবে।
এদিকে এবার নির্বাচনে আশায় বুক বেঁধে আছে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তারা নজর দিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাদের জন্য। আর এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন কোন কোন প্রার্থী তার সবকিছুই আমলে নিয়ে ভোট দেবেন তারা। নির্বাচিত করবেন নতুন জনপ্রতিনিধি। শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, মশক নিধন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ, বর্জ্য অপসারণ, খেলার মাঠ ও পার্ক তৈরি করতে পারবেন যিনি তাকেই আমরা ভোট দেব।
নতুন ওয়ার্ডের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দুই দলের মেয়র প্রার্থীরাও নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন ফের মেয়র নির্বাচিত হলে উত্তরের নতুন ওয়ার্ডগুলোকে গুলশান-বনানীর মতো উন্নয়ন করবেন। এরই মধ্যে এসব ওয়ার্ডে কিছু কাজ করা হয়েছে। আর বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এখনো স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি না দিলেও গত বুধবার নতুন ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হয়েও আপনারা উন্নয়ন বঞ্চিত ছিলেন। আমরা আপনাদের বঞ্চিত করব না।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণের নতুন ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস গতকাল বলেন, নতুন ওয়ার্ডগুলোতে ইতোমধ্যে কিছু উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আমি মেয়র হলে সেই কাজগুলো সম্পাদন করব। এ ছাড়া আমাদের দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ওয়ার্ডে উন্নয়ন করব। আর খিলগাঁওয়ের নতুন ওয়ার্ডগুলোতে প্রচারণায় গিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছিলেন, এসব ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি মেয়র হলে প্রতিটি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করব। এসব এলাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাব।
মেয়র প্রার্থীদের দেয়া এসব প্রতিশ্রুতি আমলে নিয়ে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা। কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলোও আমলে নিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ আবার বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের টানতে মেয়র প্রার্থীদের এসব প্রতিশ্রুতি কি লোক দেখানো; না কি আসলেই তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। তা-ই এখন দেখার বিষয়।