ঢাকা দক্ষিণ সিটির টাকা ‘তাপসের ব্যাংকে’ জমা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম

শেখ ফজলে নূর তাপস। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস কর্পোরেশনের স্থায়ী আমানতের বড় অংশ নিজের ব্যাংক, মধুমতিতে জমা রেখেছেন। সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক লেনদেনও অন্যান্য ব্যাংক থেকে সরিয়ে মধুমতিতে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শেখ ফজলে নূর তাপস ২০২০ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে উন্নয়নমূলক কাজে তার গুরুত্ব কম ছিল এবং তিনি সিটি কর্পোরেশনের অর্থ নিজের ব্যাংকে রাখতে বেশি মনোযোগী ছিলেন। মেয়র থাকাকালীন নগর ভবন ও দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক কার্যালয়ে মধুমতি ব্যাংকের ৬টি বুথ স্থাপন করা হয়, যেখানে নগরবাসী সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সেবার বিপরীতে টাকা জমা দিতে পারতেন। অন্য ব্যাংককে এ সুযোগ দেয়া হয়নি।
মধুমতি ব্যাংক ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া এক ব্যাংক, যার উদ্যোক্তা শেখ ফজলে নূর তাপস। ব্যাংকটি তখন ‘তাপসের ব্যাংক’ নামে পরিচিতি পায় এবং তিনি এখনো ব্যাংকটির পরিচালক। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদের স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫৪৩ কোটি টাকা মধুমতি ব্যাংকে জমা রয়েছে, যা মোট অর্থের ৪৬ শতাংশ।
২০১৮ সালে সরকারি সংস্থার টাকা বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ দেয়ার পর তাপস মধুমতি ব্যাংকে সিটি কর্পোরেশনের টাকা জমা রাখতে শুরু করেন। দক্ষিণ সিটির চলমান ৭টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টির টাকা, পরিমাণ ৪২৩ কোটি টাকা, যা মধুমতি ব্যাংকে রাখা হয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘শেখ ফজলে নূর তাপস শপথের বরখেলাপ করে তার মালিকানাধীন ব্যাংকে অর্থ লগ্নি করেছেন। এটি স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং অনৈতিক।’
অন্যদিকে, দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন যে, তাপস দক্ষিণ সিটির শত শত কোটি টাকা তার ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন।
ফজলে নূর তাপস ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি মেয়র হওয়ার পর কর্পোরেশনের স্থায়ী আমানত ও চলতি লেনদেনের বড় অংশ মধুমতি ব্যাংকে নেয়ার নির্দেশ দেন। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, তাপস মাস শেষে হিসাব নিয়ে গেলেই টাকাগুলো মধুমতি ব্যাংকে জমা রাখতে বলতেন।
বর্তমানে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রশাসক সব টাকা সরকারি ব্যাংকে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে শেখ ফজলে নূর তাপসের ব্যাংকে কর্পোরেশনের টাকা রাখার বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
অন্যদিকে, দক্ষিণ সিটির উন্নয়ন কার্যক্রমে কোনো গুণগত পরিবর্তন আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। নগরবাসী ডেঙ্গু, জলাবদ্ধতা, ভাঙাচোরা রাস্তা ও অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভুগছেন।
আরো পড়ুন: সবজিতে আগুন, মাছ-মাংসের বাজারে অস্বস্তি
শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং নিজস্ব স্বার্থে কাজ করার অভিযোগে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয়দের মতে, তিনি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার কার্যক্রম তাৎপর্যপূর্ণ হয়নি।