মেট্রোরেলের নিচে শিশুর মরদেহ: রহস্য খুঁজতে বেরিয়ে এলো মায়ের পরকীয়া

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পল্লবীতে মায়ের ‘পরকীয়ার বলি’ ছয় মাসের শিশু আমেনা হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার রাতে পল্লবী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ডিএমপি।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন- শিশুটির মা মোসা. ফাতেমা বেগম (২৫) ও তার পরকীয়া প্রেমিক মো. জাফর (৩৬)।
পল্লবী থানা সূত্রে জানা যায়, গত ৬ ডিসেম্বর বিকেলে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ১২৪ নম্বর পিলারের কাছে লেকপাড় থেকে একটি ব্যাগের মধ্যে কাপড়ে মোড়ানো এক শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। শিশুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় পুলিশ দেখতে পায় তার গলায় সন্দেহজনক আঘাতের দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে মৃত শিশুটির পরিচয় শনাক্ত হয়। পুলিশ নিশ্চিত হয় শিশুটির নাম আমেনা ও তার বয়স ৬ মাস। পরিচয় শনাক্তের পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) গভীর রাতে পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিশুটির মা ফাতেমা বেগমকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ফাতেমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় মো. জাফর (৩৬) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। ওই রাতেই জাফরকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ আরো জানতে পারে, গ্রেপ্তার হওয়া দুজনই বিবাহিত এবং পল্লবী এলাকায় বসবাস করেন। জাফর একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। ফাতেমা আগে ওই গার্মেন্টসে কাজ করার সুবাদে জাফরের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। ফাতেমার স্বামী গ্রিলের মেকানিক হিসেবে কাজ করায় কর্মসূত্রে বাসার বাইরে থাকার সুযোগে তারা দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত ছিলেন। তাদের মাঝে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক হতো। গত ৫ অক্টোবর রাতে জাফর ফাতেমার বাসায় শারীরিক সম্পর্কের জন্য আসে। শিশুটির কান্নাকাটির কারণে তাদের শারীরিক সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটায় শিশুটিকে প্রথমে স্যুপের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে বিছানার চাদর দিয়ে শিশুটির লাশ মুড়িয়ে কাপড়ের একটি শপিং ব্যাগে ঢোকানো হয়। এরপর জাফর শপিং ব্যাগে করে লাশটি নিয়ে মেট্রোরেলের একটি পিলারের কাছে ফেলে আসে।
গ্রেপ্তার হওয়া ফাতেমা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে থানা সূত্র জানায়, মৃত শিশুটির পরিচয় উদঘাটনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রচারণা চালানো হয়। ফলে শিশুটির পরিচয় উদঘাটিত হয়। পরবর্তী সময়ে নিবিড় তদন্তের ফলে এই চাঞ্চল্যকর মামলার প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হয়।
ডিএমপি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া জাফর ছয় দিনের পুলিশ রিমান্ডে পল্লবী থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।