মধ্যনগরে শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে রক্ষা পেল হাওরের ২৫ হেক্টর জমি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০৪:০৩ পিএম
চারপাশে থৈ থৈ পানি। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এখন সব নদী টইটুম্বুর। তার মধ্যে নৌকাভর্তি শিক্ষার্থী। সাধারণত হাওরাঞ্চলে বর্ষার সময় এ দৃশ্য দেখা যায়। চৈত্রের এই আকালে তা বড় বেমানান। কিন্তু একটি মহৎ উদ্দেশে হাওরের পানে ছুটছেন তারা, যেখানে ঝুঁকিতে পড়েছে কৃষকের সোনার ফসল। শিক্ষকদের ডাকে সাড়া দিয়ে স্কুল ও কলেজের পোশাক পরেই রওনা হন ঘটনাস্থলে। অংশ নেন ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে।
এভাবেই সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে রক্ষা পেল মেঘনা হাওরের ২৫ হেক্টর কাচা ধানি জমি। বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালে মধ্যনগর বি. পি. উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছয়জন শিক্ষক ও ৬০ জন শিক্ষার্থী ধসে যাওয়া বাঁধের সংস্কার কাজে অংশ নেন। এতে রক্ষা পায় মেঘনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের মেঘনা হাওরে প্রায় ৩০ হেক্টর বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ হেক্টর কাটা হয়েছে। বাকি ২৫ হেক্টর ধান পাকতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে।
[caption id="" align="aligncenter" width="2048"]
এদিকে, গত কয়েকদিনে ভারতের চেরাপূঞ্জিতে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, শাল্লা, শান্তিগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরের একাধিক বাঁধ। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এরই মাঝে মঙ্গলবার রাতে মেঘনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়ে। রাত থেকেই স্থানীয় কৃষকরা বাঁধ মেরামতের কাজ করছিলেন। বুধবার সকালে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসার পর সবাই মিলে বাঁধ সংস্কারের কাজে যোগ দেন। বস্তায় মাটি ভরে ভেঙে যাওয়া অংশে মেরামত করেন শিক্ষার্থীরা।
মধ্যনগর বি. পি. উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জয় দে ও অলক তালুকদার জানায়, আজ সকালে কলেজে যাওয়ার পর স্যারেরা বাঁধের অবস্থা খারাপ, সবার সঙ্গে মেরামতের কাজ করার কথা বলেন। তারা বলেন, কৃষক ভালো থাকলে, দেশ ভালো থাকবে। আমরাও নৌকা দিয়ে চলে গেলাম বাঁধে। এতে অংশ নিতে পেরে নিজেদের গর্ব হচ্ছে।
[caption id="attachment_343617" align="aligncenter" width="700"]
এ বিষয়ে মধ্যনগর বি. পি. উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বিজন কুমার তালুকদার বলেন, গতকাল রাতে মেঘনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ধসে যায়। আজ সকালে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আসারপর সবাই মিলে বাঁধ সংস্কারের কাজে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একা নয়, বরং সবাই মিলে ভালো থাকার নামই জীবন। এই বোধটা আজকের কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারলো। পানি যদি আরও বৃদ্ধি পায় হয়তো মেঘনা হাওরটি ডুবে যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের চেতনা সারাজীবনের জন্য কাজে লাগলো।

এ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রমাপদ চক্রবর্তী বলেন, হাওরের অবস্থা খুবই শোচনীয় ও সংকটাপন্ন। কান্নাকাটি করছেন হাওরপাড়ের কৃষক ও গৃহবধূরা। নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই নদী খনন করা খুবই জরুরি।
তিনি আরও বলেন, বাঁধের কাজের ব্যাপারে ছাত্ররা আগ্রহী ও আত্মনিবেদিত। তাদের বলামাত্রই হাওরে যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুনতাসির হাসান বললেন, এই আপদকালীন সময়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছি আমরা। অনেকে বাঁধের মেরামত কাজে যোগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই মহৎ কাজে উৎসাহ দেয়ার মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছেন।