৮ দিনেও সরকারি চাল পাননি বরিশালের ৭৫ হাজার জেলে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২৭ এএম

ফাইল ছবি
প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় গত ৭ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এ সময় জেলেদের মধ্যে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল দেয়ার কথা থাকলেও এখনো চাল পায়নি বরিশালের জেলেরা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তবে দু’একদিনের মধ্যে চাল বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। এদিকে জেলায় ৭৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে থাকলেও ৫১ হাজার ৭০০ জনের জন্য বরাদ্দকৃত চাল এসেছে। ফলে বিতরণ শুরু হলে প্রায় ২৪ সহস্রাধিক জেলে বঞ্চিত হবেন চাল পাওয়া থেকে।
বরিশাল সদর উপজেলার ৯ নম্বর টুঙ্গীবাড়িয়া ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে ইউনুস জানান, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার ৮ দিন পার হলেও এখনো সরকারের বরাদ্দকৃত কোনো চাল পাননি। আরেক জেলে রহিম জানান, মহাজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। পেটের দায়ে নদীতে জাল ফেলায় তা নিয়ে গেছে পুলিশ। মহাজনের জালের দাম পরিশোধ নিয়েও চিন্তায় আছেন তিনি।
শুক্রবার বরিশাল সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে এমনি অভিযোগ শোনা যায় জেলেদের মুখে। সবার একটাই অভিযোগ নিষেধাজ্ঞার ৮ দিন পার হলেও এখনো কেন তাদের ঘরে চাল পৌঁছায়নি। ফলে অনেকেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই জাল নিয়ে নদীতে নামছেন। উপজেলার একাধিক জেলে জানান, প্রতিবারই নিষেধাজ্ঞার সময়ে তাদের বরাদ্দের চাল হাতে পেতে বিলম্ব হয়। এতে তাদের সংসার চলে ধারদেনা করে। এ দেনার দায়ে তাদের বারবার সংকটে পড়তে হয়।
সদর উপজেলার ৯ নম্বর টুঙ্গীবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নূর হোসেন মামুন বলেন, জেলেদের জন্য বরাদ্দের চালের চিঠি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই চাল বিতরণ শুরু হবে।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপিকা শাহ সাজেদা বলেন, ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের দেয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে হলে ইলিশের সঙ্গে সরাসরি জড়িত জেলেদের ঘরে ঘরে সময়মতো চাল পৌঁছে দিতে হবে। অন্যথায় জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বিরত রাখা যাবে না। জেলেদের ঘরে ঠিকমতো খাবার পৌঁছালে জেলেরা নদীতে নয়, ঘরেই থাকবে।
এদিকে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১০টি উপজেলায় মোট ৭৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে ৫১ হাজার ৭০০ জন জেলের জন্য বরাদ্দের চাল এসেছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে। তবে নিষেধাজ্ঞার ৮ দিন পার হলেও এখনও জেলার সব উপজেলায় সেই চাল বিতরণ শুরু করতে পারেনি মৎস্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী উপজেলায় ইতোমধ্যে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। তবে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শুধু দুটি ইউনিয়নে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (চ. দা.) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে বৃহস্পতিবার দুটি ইউনিয়নে চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলোতে আজকালের মধ্যে বিতরণ শুরু হবে। তিনি আরও জানান, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মোট ৫ হাজার ৩০০ জেলে থাকলেও ৪ হাজার ২০০ জেলের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পেয়েছেন তারা। বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জেলেদের বরাদ্দের চাল প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে দু’এক দিনের মধ্যেই বিতরণ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে ৩টি উপজেলার চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বরিশাল জেলায় মোট ৭৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে থাকলেও ৫১ হাজার ৭০০ জনের জন্য বরাদ্দকৃত চাল এসেছে। বাকি প্রায় প্রায় ২৪ হাজার জেলে পুরোপুরি এ বরাদ্দের আওতার বাইরে থাকছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাকি জেলেদের চাল দেয়া সম্ভব নয়। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় যে পরিমাণ চাল বরাদ্দ দিয়েছে তা দিয়ে যতদূর সম্ভব দিচ্ছি।