চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠেই হচ্ছে জব্বারের বলী খেলা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
অবশেষে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী মাঠেই হচ্ছে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয় আবদুল জব্বারের বলী খেলা। যদিও কয়েকদিন আগেই আব্দুল জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির নেতাকর্মী জানিয়েছিলেন মাঠের সামনে গোলচত্বরে বলি খেলা হবে। তবে এরই মধ্যে স্থানীয় সংসদ সংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে মেলা কমিটির নেতাকর্মী সাক্ষাৎ করলে তিনি মাঠেই বলি খেলা আয়োজন করতে বলেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় এটি ‘জব্বইজ্জার বলি খেলা’ নামেই বেশি পরিচিত।
আব্দুল জব্বারের বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ২৫ এপ্রিল লালদিঘী ময়দানেই বলি খেলা হবে। ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বৈশাখী মেলা হবে। তবে মাঠে শুধু বলী খেলা হবে, সেখানে কোনো মেলা হবে না। ২৬ এপ্রিল চাটগাঁইয়া ঈদ উৎসব হবে। উপমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। মেলা কমিটির সভাপতি জহরলরাল হাজারী জানিয়েছেন, লালদিঘীর মাঠে বলী খেলার মঞ্চ তৈরির সার্বিক প্রস্তুতি আমরা শুরু করে দিয়েছি। গত বছর মাঠের বাইরে হলেও এবার মাঠেই হবে বলিখেলা। উপমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, সহসভাপতি ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ আকতার, আকতার আনোয়ার, বলরাম চক্রবর্তী ও তাপস দে উপস্থিত ছিলেন।
করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনাকাল কাটিয়ে ২০২২ সালে জাঁকজমকভাবে ১১৩তম আসরের প্রস্তুতি নেয়া হলেও শেষমুহূর্তে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বলী খেলার ভেন্যু লালদিঘী মাঠ সংস্কার করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার ইতিহাসের আলোকে স্থায়ী মঞ্চ, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ আরো কিছু স্থাপনা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় এবং রমজান বিবেচনায় নিয়ে বলী খেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল কমিটি। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে ও তত্ত্বাবধানে লালদিঘী মাঠের পরিবর্তে গোলচত্বরে বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ১১৪তম আসরও লালদিঘী ময়দানের পরিবর্তে গোলচত্বরে করার ঘোষণা দেয়া হলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কারণ, লালদিঘী ময়দান গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বলী খেলা’ নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলী খেলার সূচনা করেন তিনি। সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলী খেলা। বলিখেলার একদিন আগে-পরে তিনদিন ধরে লালদিঘীর পাড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রায় দুই বর্গকিলোমিটারজুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।