সিংগাইরে সাংবাদিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৯ পিএম

ছবি: সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা ইত্তেফাক সংবাদদাতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন উপজেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও ঠিকাদার হায়দার ইসলাম ।
এ ব্যাপারে তিনি বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে হায়দার ইসলাম গত ৭ মার্চ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালত মানিকগঞ্জ-১ এ চাঁদাবাজির মামলাটি দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
ইত্তেফাক সংবাদদাতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তী পৌর এলাকার মধ্য সিংগাইর মহল্লার মৃত সুবোধ চক্রবর্তীর ছেলে। মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন- পৌর এলাকার কাশিমনগর মহল্লার আজমত (৪২), আব্বাছ (৪৫), আছমত আলী (৪৩) ও কাইউম (৩৫)।
মামলার বাদী হায়দার ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছি। মানবেন্দ্র চক্রবর্তী টাকা না দিয়েই তার নিজস্ব একটি পুকুর মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে বলেন। অপারগতা প্রকাশ করলে অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় মানবেন্দ্র আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আসামিদের দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় মানবেন্দ্র চক্রবর্তী আমার বিরুদ্ধে তার পত্রিকায় মিথ্যা বানোয়াট ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করে। এ ছাড়া প্রকাশিত সংবাদে আমাকে রিক্সাচালক আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সম্মানহানি করে।
তিনি আরো জানান, গত ৭ মার্চ আদালতে দায়ের করা তার মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। লোকমুখে বলে বেড়াচ্ছে মামলা তুলে না নিলে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী আমার বিরুদ্ধে আরো মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করবে। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কাশিমনগর খেয়া ঘাটে ২ লাখ টাকার ডাইভারসন নির্মাণ সামগ্রী এবং বালু সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আরো ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে আসামিরা।
পাশাপাশি আমাকে মেরে লাশ গুম করে ফেলার হুমকিও দেয় তারা। এরপর মামলার ১নং আসামি মানবেন্দ্র চক্রবর্তী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার ইত্তেফাক পত্রিকায় মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করে আমার ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে বলে তিনি জানান। যে কারণে আমি নিরাপত্তা চেয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আরো একটি লিখিত আবেদন করেছি।
অভিযুক্ত ইত্তেফাক সিংগাইর সংবাদদাতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, আমি নদী দখল ও ভরাট নিয়ে গ্রামবাসী, ভুক্তভোগী ও তার বক্তব্য দিয়ে সঠিক নিউজ করেছি। তারপরেও সে যদি মামলা দেয় আমার কি করার আছে। মামলা তুলে নিতে হুমকি প্রসঙ্গে এসপি অফিসে লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চাঁদাবাজি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ বলেন, মামলার কপি হাতে পেয়েছি। তদন্ত চলছে, যথাসময়ে প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইত্তেফাক সংবাদদাতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের কারণে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষে অফিস সুপার মো. মোফাজ্জল হোসাইন দেওয়ান বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। গেল ইউপি নির্বাচনে এক প্রার্থীর এজেন্টকে জিম্মি করে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী ও তার আরেক সহযোগী মোস্তাফিজুর রহমান খান মুকুল ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় টাকা নেয়ার কথোপকথনের প্রমাণাদিসহ জনৈক রনি বাদী হয়ে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার (সিংগাইর সার্কেল) বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার সিংগাইর সংবাদদাতা মো. সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় মানবেন্দ্র চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা করেন তিনি।