শিবালয়ে মরা গরুর মাংস বিক্রি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৯ এএম

ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে একটি অসুস্থ গরুর মাংসের সাথে অপর একটি মরা গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছোট বুতুনী বিলবরুল গ্রামের মৃত হোসেন মোল্লার ছেলে সাকেন মোল্লার বাড়িতে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে কয়েক দফা গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গৃহস্থ ও দালালচক্রের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে এবং সমঝোতা বন্ধ হয়ে যায়।
সাকেনের স্ত্রী ভানু বেগম জানান, ২৮ মার্চ (মঙ্গলবার) ফসলি মাঠ থেকে সংগৃহীত ঘাস তাদের বাড়ির গরুগুলোকে খাওয়ালে বেশ কিছুক্ষণ পর প্রত্যেকটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায়, স্থানীয় পশু চিকিৎসক মো. ইব্রাহীমকে সংবাদ দেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসক আসার আগেই দুই লাখ বারো হাজার টাকার বড় গাভিটি মারা যায়। অপর গরুটিও মরণাপন্ন হলে পশু চিকিৎসক ইব্রাহীমের পরামর্শে বটিদা দিয়ে আমাদের বাড়ির পলাশ এবং রাহেজ অসুস্থ গরুটি জবাই করেন। কিন্তু মরা গরুটিকে জবাই করেছেন সেটি আমি দেখিনি। এলাকার গরুর দালাল সামছুল, আলমগীর, জাহাঙ্গীর ও আলিমের মাধ্যমে কসাইয়ের কাছে ৩০ হাজার টাকায় অসুস্থ অবস্থায় জবাই করা গরুটি বিক্রি করা হয়। কিন্তু এই গরুর মাংসের সাথে কসাইরা রাতের অন্ধকারে মরা গরুটির মাংসও নিয়ে গেছে। তবে, মরা গরুটি জবাই করেছে আমি দেখিনি।
গ্রাম্য মাতব্বর বাবু মোল্লা জানান, ছোট বুতুনী বিলবরুল গ্রামের সাকেন মোল্লার বাড়ি থেকে একটি অসুস্থ গরুর মাংসের সাথে অপর একটি মরা গরুর মাংস রাতের বেলা কসাইদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। বিষয়টি সুরাহার লক্ষ্যে আমরা বেজপাড়া বাজারে এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে বসেছিলাম, কিন্তু গৃহস্থ ও দালালদের সাথে হাতাহাতি হলে বিষয়টি মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে আমরা দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মো. মিন্টু জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে মীমাংসার লক্ষ্যে বসেছিলাম। কিন্তু কসাইদের কাছে গরু বিক্রির মধ্যস্ততাকারীদের একজন মো. সামছুল মোল্লা চেয়ারম্যানের কাছে সময় প্রার্থনা করলে বিচারকার্য শুরু বা শেষ হয়নি। আমি এলাকাবাসীর কাছে শুনেছি, কসাইরা মরা গরুসহ দুটি গরুই এখান থেকে মাংস তৈরি করে রাতে আজিম উদ্দিনের ভ্যানে নিয়ে গেছে। মরা গরুর মাংস কেন বিক্রি করা হলো এবং এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী আমার কাছে বিচার চেয়েছেন।
বেজপাড়া গ্রামের মৃত সবারত মোল্লার ছেলে মো. সামছুল মোল্লা (এলাকায় গরুর দালাল হিসেবে পরিচিত) জানান, আমি সংবাদ পেয়ে সাকেনের বাড়িতে গিয়ে দেখি দুটো গরুর গলা কাটা। তখনও ওখানে কোন কসাই আসেনি। আমার কাছে সাকেনের ছেলে শামীম কসাইয়ের মোবাইল নম্বর চেয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে নম্বর না থাকায় ওরাই কসাই ডেকে আনে। কসাইয়ের কাছে ত্রিশ হাজার টাকায় গরু বিক্রির সময় আমি সাথে ছিলাম। এই জন্য সাকেন আমাকে আড়াই হাজার টাকা দেয়। তবে ওই টাকা আমি একা নেইনি। জাহাঙ্গীর, আলমগীর, আলীমকে ভাগ করে দিয়েছি। আমার সামনেই দুটো গরুর মাংস কসাইরা আজিম উদ্দিনের ভ্যানে নিয়ে গেছে। তবে, কসাইদের আমি চিনিনা এবং তাদের মোবাইল নম্বরও আমার কাছে নেই।
সাকেনের সাথে আপনার হাতাহাতি হলো কি নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, সালিশের মধ্যে আমার নামে উল্টাপাল্টা কথা বলায় তার সাথে আমার ঝগড়া হয়।
পল্লী পশু চিকিৎসক মো. ইব্রাহীম (এআই টেকনিশিয়ান) জানান, আমি সাকেনের বাড়িতে গিয়ে দেখেছি একটা বড় গাভি মারা গেছে। অপর গরুটির তাপমাত্রা পরিমাপ করে দেখি সেটির অবস্থাও সংকটাপন্ন। তখন বাড়ির মালিক সাকেন আমার সামনেই বটিদা দিয়ে মৃতপ্রায় গরুটি জবাই করেন। আমি লোকমুখে পরে শুনেছি, সাকেন মোল্লা দালালদের মাধ্যমে মরা গরুটিসহ দুটি গরুর মাংসই কসাইদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমি যখন সাকিনের বাড়ি থেকে চলে আসি তখনও ওখানে সামছুল মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।
তবে আপনি বিষয়টি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে অবহিত করেছিলেন কিনা প্রশ্নে তিনি কথা এড়িয়ে যান।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিক মোবাইল ফোনে জানান, এলাকার মেম্বারকে সাথে নিয়ে আপনি বিষয়টি অল্পের মধ্যে শেষ করে দেন।
এই বিষয়টি থানাকে অবহিত করেছেন কিনা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, আমি থানাকে অবহিত করিনি। তবে, আমাদের ইউপি মেম্বার ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে দোষীদের আর্থিক এবং দৈহিক শাস্তি দাবি করছি।
শিবালয় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফারুক হোসেন জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এখনই আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
শিবালয় থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহানুর এ আলম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে এ পর্যন্ত আমাকে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। আমি এখন আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। আমি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমানের মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল লতিফ দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।