প্রতিপক্ষের হামলায় বরখাস্তকৃত কনস্টেবল নিহত

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৩৬ পিএম

কনস্টেবল বাঁধন। ছবি: ভোরের কাগজ
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় রাহেজুল আমিন বাঁধন (৩০) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার বাশরা গ্রামে এ হামলায় আরো পাঁচজন আহত হয়েছেন। নিহত রাহেজুল আমিন বাঁধন ওই গ্রামের আলী আহমেদের ছেলে। সে নোয়াখালী জেলা পুলিশের বরখাস্তকৃত পুলিশ কনস্টেবল।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রবিবার সকালে বাশরা গ্রামের বাড্ডাবাড়ীতে হামলা করে বাধন ও তার লোকজন। হামলায় ওই বাড়ির নুরু মিয়ার ছেলে হাছান আহত হয়। এই ঘটনার জের ধরে বেলা সাড়ে ১১টায় এলাকার লোকজন বাধনের বাড়ীতে হামলা করে। হামলাকারীরা তার ঘরের দরজা জানালা ভেঙে তার ঘরে প্রবেশ করে। রামদা লাঠিসোটা দেখে ভয়ে বাধন বাচার জন্য পাশের রফিকুল ইসলামের দালানের একটি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। হামলাকারীর দল রুমের দরজা ভেঙে বাধনকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দালানের প্রধান ফটকের সামনে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে তাকে ফেলে রেখে যায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলায় আহত বাধন ও তার মা এবং ভাই সুমনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গৌরীপুরে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে নেয়ার পর বাধন মারা যায়।
নিহত বাঁধনের ভাবী (বড়ভাইয়ের স্ত্রী) আয়েশা আক্তার বলেন, দক্ষিণ পাড়ার হাসেম, রুবেল ও মানিকসহ ২০-২৫ জনের সন্ত্রাস বাহিনী রামদা, হকিস্টিক লোহার পাইপ নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে। তাদের ভয়ে আমার দেবর পাশের রফিক কাকার দালানে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়েও তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। এসময় সন্ত্রাসীরা আমার ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।
দালানের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাঁধন আমার বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা রুমের দরজা জানালা ভেঙ্গে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ও তাকে বের করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে বিল্ডিংয়ের সামনে ফেলে রাখে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান, বাধন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান ছিলো। তার অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠছিল। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান, নতুন বাড়ি করলেই তাকে চাঁদা দিতে হতো। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলে আবার উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো। তার হয়রানির শিকার বাসরাসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন কিশোর গ্যাং হোতা বাধনের অত্যাচার থেকে বাঁচতে ও তার বিচার দাবী করে ২০২১ সালের ১৭ আগষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুটিয়া এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
গৌরীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থল থেকে বাধনসহ তার পরিবারের আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত গৌরীপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হলে সেখানে বাঁধন মারা যায়। বাধন পুলিশের কনস্টেবল পদে নোয়াখালী জেলা পুলিশে কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন অভিযোগের প্রায় দুই বছর আগে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ সাতটি মামলা রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি, এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।