অনেক আশ্বাস, অনেক প্রতিশ্রুতি তবুও কোনো পরিবর্তন হয় না

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১১:০২ এএম

ছবি: ভোরের কাগজ
** এবারের ঘূর্ণিঝড়ে শেষ মুহূর্তে উত্তরের দিক থেকে প্রবাহিত বাতাসের কারণে তীব্রতা কিছুটা কমেছে। না হলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতো **
৮২ বছরের বৃদ্ধ মোহাম্মদ হোসেনের জন্ম কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া এলাকায়। বাপ-দাদার বসবাসও এই এলাকায়। সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দা হওয়ায় অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনেক আশ্বাস, অনেক প্রতিশ্রæতি। এসব কথা বলছিলেন আর চোখের জল ফেলছিলেন মোহাম্মদ হোসেন।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’য় ভেঙে গেছে পলিথিন, বাঁশের বেড়া ও কিছু কাঠ দিয়ে তৈরি তার ঘরটি। ঘূর্ণিঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘরের আসবাবপত্র। মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্থা এসে আশ্বাস ও প্রতিশ্রæতি দিয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমার বাপ-দাদারাও মানবেতর জীবনযাপন করেছে, আমাকেও অসহায় মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। আমার ছেলে-নাতিদেরও একই অবস্থা। আমরা প্রশাসনের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। আমাদের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি, বাড়ি-ঘরও ঠিক করে দেয়া হয়নি। আমরা এখানকার বাসিন্দারা চাই- আমাদের যেন স্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়।
‘মোকা’র ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু আমার ৮২ বছরের জীবনে আমি এরকম ঘূর্ণিঝড় দেখিনি। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ছিল ভয়ংকর। শেষ মুহূর্তে উত্তরের দিক থেকে প্রবাহিত বাতাসের কারণে তীব্রতা কিছুটা কমেছে। না হলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতো।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দারা হয় লবণ উৎপাদন নয়তো মাছ ধরার কাজে যুক্ত। স্বল্প আয়ের এসব মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এমনিতেই মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকা তাদের জীবনে যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ৪২ বছরের মো. রফিক ক্ষুদ্র দোকানদার। তিনি জানান, এবারের ঘূর্ণিঝড় আমাদের এলাকায় ’৯১-এর ভয়াবহতাকেও হার মানিয়েছে। এলাকার অনেকের ঘরের ছাউনি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। আজ (সোমবার) সকালে এসে দেখি সব উড়িয়ে নিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছি মানবেতর, অসহায় অবস্থায় আছি। কোনোদিন কোনো সাহায্য-সহায়তা বা অনুদান পাইনি। আমরা সরকারের কাছে সহায়তা চাই।
সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে যুক্ত ২৮ বছরের সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের ঘরের ছাউনি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ডেকচি-পাতিল যা ছিল সবই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে এসে দেখি কিছুই নাই।