ঝুঁকিতে নবনির্মিত রাজাপুর পিসি গার্ডার সেতু

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩, ০৯:০১ এএম

ছবি: ভোারের কাগজ
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই শত কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত মৌলভীবাজারের রাজাপুর পিসি গার্ডার সেতুর আশপাশ থেকে বলগেট মেশিনে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। নদীর মাঝখানে সেতুর পিলারের কাছ থেকে বালু উত্তোলন করায় পিলারের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেতুটি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে স্থায়ী বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ।
এদিকে বালু উত্তোলনকারী জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রশাসনের আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানা যায়নি। এলাকাবাসী মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হলে হয়তো নদী ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমবে। রেহাই পাবে শত কোটি টাকার সেতু। দীর্ঘদিন ধরে একটি বালু খেকো সিন্ডিকেট কারো তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে রাজাপুর সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন করে এলেও জনপ্রতিনিধি বলে বরাবরই রয়ে গছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে মনু নদীর ওপরে নির্মিত রাজাপুর পিসি গার্ডার সেতুর প্রায় একশ মিটারের ভেতর থেকে বলগেট মেশিনে সকাল-সন্ধ্যা বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একটি বা দুটি নয়, অন্তত ১৩টি বলগেট মেশিনে দিয়ে বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে বালু উত্তোলন করছেন পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কিবরিয়া হোসেন খোকন। সরকারের শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর পিলারের গোড়ায় কোনো প্রোটেকশন দেয়াল না থাকায় সেতুটি চালু হওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় ১ বছর ধরে সেতুর এক কিলোমিটারের ভেতর অর্থাৎ একই স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ ও পাশের আবাদি জমি বিলীনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, বালু উত্তোলন না করতে প্রশাসনের লোকজন বলে যাওয়ার পরই ফের বালু উত্তোলন শুরু হয়। বিষয়টি বারবার প্রশাসনকে অবহিত করার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং বালু দস্যু খোকন বেপরোয়াভাবে তাদের বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে আসছে। যে কারণে ভাঙনের কবলে পড়ে নদের পাড়সহ হুমকির মুখে পড়ে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু।
পৃথিমপাশার আনোয়ার হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসে বাঁধা দেয়া হলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। আজাদ মিয়া বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পর রাজাপুর সেতু করা হয়েছে। তবে উদ্বোধনের আগেই সেতুটির মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে এই বালু উত্তোলনের মাধ্যমে। আমরা বাঁধা দিলে কেউ বা মানে না।
পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, কিবরিয়া হোসেন খোকন বলেন, রাজাপুর সেতুর দুই পাশের তিনশ ফুট মুখ ভরাট করার জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক বালু দিয়ে ভরাট করে দেয়া হয়েছে। তবে সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য দ্বিতীয় দফা চুক্তি হলে বালু সরবরাহ করা হবে। তবে ঠিকাদার বালু তোলে রাখার স্থান দিতে না পারায় বর্তমানে যে বালু তোলা হচ্ছে তা ব্যবসার জন্য। সেতুর কাছে বালু তোলা বিষয়ে তিনি আরো বলেন, সরকারি কাজের জন্য বালু যতটুকু দূর থেকে দেয়া সম্ভব সেখান থেকেই আমরা দিচ্ছি।
মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, রাজাপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় প্রায় একশ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি উঠে এসেছে সেতুর খুব কাছ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু মহাল যারা লিজ নিয়েছেন তারা সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন করেন। তাতে সেতুর পিলারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ তোয়াক্কা না করে সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলনে উদ্বোধনের আগেই মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারের শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জানেনই না মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
একদিকে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কার কাজ চলছে। আর অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় অন্তত একশ স্থানে মাটি কেটে ও বলগেট মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে অনেক সড়ক-মহাসড়ক হুমকির মুখে পড়ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ব্যাপকভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মনু নদী ও তীরবর্তী মানুষ। নদীর ভাঙন রোধে সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। এ অবস্থায় অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।