বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম আজও পানির নীচে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৪ পিএম

নগরীর বহদ্দারহাটে অবস্থিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের বাড়িও পনিতে ডুবে গেছে। শনিবার দুপুরে মেয়র মো. রেজাউল করিমও রিক্সায় করে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ছবি: ভোরের কাগজ

শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ থানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়। ছবি: ভোরের কাগজ
মেয়র তার জলমগ্ন বাড়ি ফিরেছেন রিকশায় করে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা: জেলা প্রশাসনের মাইকিং ও ভ্রাম্যমান আদালতের উচ্ছেদ অভিযান
চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানসহ আশপাশের এলাকায় গত তিনদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির কারনে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। শুক্রবারের মতো শনিবারও (৫ আগস্ট) নগরীর বিভিন্ন এলাকার জনপদ. দোকানপাট ও সড়ক তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষনে পাহাড়ি ধ্বসের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত লোকজনদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং শুরু করেছে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে আকবরশাহ এলাকার বিভিন্ন পাহড়ি এলাকায় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদেরকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের টীম কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ওমর ফারুক এ তথ্য জানান। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২-৩ দিন পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নাগরিকদেরকে জলাবদ্ধতায় ভুগতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রবল বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙ্গরে অবস্থানরত বিভিন্ন জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা যায়নি। এছাড়া, বন্দরের ভেতর থেকেও সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ থেকে ও বিভিন্ন শেড থেকে সাথারণ পণ্য পরিবহনও মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।
শনিবারও চট্টগ্রাম নগরীতে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে ডুবেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা। নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বাসিন্দাদের। দোকানপাট-কাাঁচাবাজারেও পানি ঢুকে পড়ায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদেরকে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।
গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাতভর নগরীসহ এর আশপাশের এলাকায় কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়। শনিবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকেও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতে চলতে থাকে সারদিন। নগরীর বেশির ভাগ নালা-নর্দমা ও খালগুলো এই বৃষ্টির পনি উপচে পড়ায় প্লাবিত হয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকা। একদিকে প্রবল বৃষ্টির পানিতে নালা ও খাল উপচে জনপদ প্লাবিত হয়েছে, তারওপর জোয়ারের সময় নগরীর পানি কর্নফুলী নদীতে তো নামতেই পারে না। বরং নদী থেকে পানি এসব খাল দিয়ে জনপদে ঢুকে পড়ছে।
[caption id="attachment_453651" align="aligncenter" width="700"]
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানিয়েছেন, মৌসুমী বায়ূর সক্রিয়তার কারণে আজ (শনিবার) সন্ধ্যার পর থেকে নগরীতে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে, যা অব্যাহত থাকবে রোববার দিনভর। এতে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণের পাশাপাশি পাহাড় ধসের সম্ভাবনা আছে।
তিনি জানান, শনিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। তবে নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিস ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে শহরে জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা এবং নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শনিবারও প্রবল বৃষ্টির পানিতে নগরীর চাকতাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চকবাজার, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা,বাকলিয়া, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা,চান্দগাঁও, ষোলশহর, মুন্সীপুকুর পাড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, মুরাদপুর ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে ও অলিগলি পানিবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। বাকলিয়া এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহকারি রাশেদা জানিয়েছেন, তাদের এলাকার বিভিন্ন ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় রান্নাও করতে পারেননি নিজের ঘরে। রাতে ঘুমাতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছে। এমন দুরাবস্থা নগরীর বিভিন্ন এলাকাতেই। ঘর থেকে কাজে বের হওয়া নাগরিকরা পড়েন বিপাকে। রিকশা, সিএনজি আটোরিকশাসহ বিভিন্ন গনপরিবহন এই সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
নগরীর এই পানিবন্দী অবস্থার খবর জানাতে গণমাধ্যমকর্মীরাও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ভিজেছেন। বিশেষ করে আরেঅকচিত্র সাংবাদিক ও বিভিন্ন টিভিতে কর্মরত সাংবাদিকদেরকে এই বৃষ্টিতে ভিজে পানিতে দাঁড়িয়ে খবর জানাতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের মেয়রের বাড়িও পানিতে ডুবে গেছে প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে সাধারণ নগরবাসীই যে শুধু দুর্ভোগে পড়েছেন তা নয় কিন্তু। স্বয়ং মেয়র মো. রেজাউল করিমের বহদ্দারহাটের বাড়িও পনিতে তলিয়ে গেছে।
শনিবার দুপুরে মেয়র নিজেও বাড়িতে ফিরেছেন একহাটুর উপরে পানি ভেঙে রিকশায় করে। এসময় তার কাছে নগরীর এ জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাংবাদিকদের তিনি জবাব দেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিভিন্ন খালে যে বাঁধ দিয়েছিল সেসব বাাঁধের মাটি ঠিকভাবে ও পরিপূর্ণ অপসারণ না করাতে নগরীল পানি নিষ্কাশন হতে পারছেনা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীরা সাধ্যমতো নগরীর ভেতরে যেসব ছোট নালা-নর্দমা আছে সেগুলো পরিষ্কারের চেষ্টা করছে।
পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে সরানোর চেষ্টা প্রবল বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের আশংকায় জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য আকবরশাহ এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা শুরু করেছে।
ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুকের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা শনিবার সন্ধ্যায় আকবরশাহ এলাকার বিজয়নগর পাহাড় ঝিল পাহাড় এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক জানান, এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে নগরীতে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।