বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ‘এসি’ ঘর

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:২৮ পিএম

নওগাঁর আত্রাইয়ে কালের আবর্তে এবং মানুষের রুচি বোধের পরিবর্তন, জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন সর্বোপরি আধুনিকতার স্পর্শে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি টালির চালা। এক সময় মানুষের অন্যতম বাসস্থান হিসেবে ব্যাপক প্রচলন ছিল মাটির তৈরি টালির চালা ঘড়। দু’যুগ আগেও গ্রামের ৫০-৬০ ভাগ একতলা এবং দ্বিতল মাটির বাড়িতে বাস গৃহের প্রাচীন ঐতিহ্য টালির চালা ব্যবহার হত। সে সময় উপজেলার প্রতিটি গ্রাম লালচে টালির রাজ্য ছিল। কিন্তু এখন আর টালির ঘর চোখে পড়েনা বল্লেই চলে।
কোনো কোনো বাড়িতে পুরাতন টালির রান্না ঘর আছে, তবে থাকার ঘর হিসেবে আর কেউ টালি ব্যবহার করে না। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাস গৃহের প্রাচীন ঐতিহ্য টালি। কাঠ বা বাঁশের বাটামের উপর থরে থরে সাজানো হয় টালি, যা ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যতদিন বাটাম নষ্ট না হয় তত দিন টালির চালে আর কোন ব্যায় করতে হয় না। টালির বিশেষ বৈশিষ্ঠ হচ্ছে আগুনে বা বৃষ্টিতে নষ্ট হয় না। তবে ঝড়ে ঘর বিধ্বস্ত হইলে টালি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। শীত, গরম দুই ঋতুতেই আরাম দায়ক টালির ঘর। শীত মৌসুমে বাইরে যখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তখন এ ঘর উষ্ণ থাকে। আর প্রচন্ড গরমেও এর ভেতরটা তুলনামূলক শীতল থাকে। রান্না ঘরে টালির চালা থাকলে ধোঁয়া বেরুতে কোনো অসুবিধা হয় না।
বর্তমানে কোথাও নতুন করে টালির ঘর তৈরি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আবার মৃৎ শিল্পীরা এখন আর টালি তৈরি করে না। উপজেলার পাঁচুপুর গ্রামের শ্রী পরিমল সরকার নামে এক প্রবীণ জানান, টালির প্রচলন শেষ। ইচ্ছে থাকলেও এখন আর নতুন করে টালির চালা করা যাবেনা। তিনি আরো বলেন, মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তাই তাঁর সন্তানেরা টালি দিয়ে ঘরের চালা করতে চাই না। উপজেলা সাহেবগঞ্জ পাল পাড়া গ্রামের প্রবীণ পরান মল্ডল জানান, টালির বদলে টিন ব্যবহার হচ্ছে। টালি ব্যবহার করতে চাইলেও টালি পাওয়া যায় না। উপজেলার দমদমা গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, গ্রামের হাজারো ঐতিহ্যের অন্যতম টালির ঘর আজ বিলুপ্তির সারিতে।গ্রামে এখন তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়ি, তাতে শোভা পাচ্ছে ছাদ অথবা প্রযুক্তির সব সৌখিন টিন। সিমেন্টের তৈরি টিন, প্লাস্টিকের রঙিন টিন অথবা টিনের চালা।
এ বিষয়ে উপজেলার পাঁচুপুর গ্রামে মৃৎ শিল্পী হরিদাস পাল জানান, টালির দাম কম, বিক্রি করে খরচ উঠে না। টালি বানানো অনেক আগে ছেড়ে দিয়েছেন তারা। প্রায় ১৯ বছর আগে বাবার সাথে যুবক বয়সে টালি তৈরি করেছিলেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আর টালি তৈরি করেননি।