আত্রাইকে গিলে খাচ্ছে মৎসঘের, নির্বিকার প্রশাসন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৩:১৮ পিএম

আত্রাই নদী দখল করে এভাবেই চলছে মাছ চাষ। ছবি: প্রতিনিধি।

আত্রাই নদীর মানচিত্রই পাল্টে দিয়েছে দখল করা এসব ঘের। ছবি: প্রতিনিধি।
মান্দায় আত্রাই নদী দখল করে অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক মৎস্য ঘের তৈরি করা হয়েছে। ঘেরের নামে গাছের কাটা ডালপালা নামিয়ে ও বাঁশের বেড়া দিয়ে নদীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে অসাধু ঘের ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় নদী থেকে অবৈধ সব ঘের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর নদী থেকে গাছের ডালপালা ও বাঁশের বেড়াসহ প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেয়ার জন্য এলাকায় মাইকিং করে উপজেলা মৎস্য দপ্তর।
তবে এখন পর্যন্ত অবৈধ ঘেরগুলো সরিয়ে নেয়া হয়নি। দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি প্রশাসনকে। গত কয়েকদিন ধরেই এসব ঘেরে জাল নামিয়ে মাছ শিকারের উৎসব করছেন দখলদাররা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মাছ শিকারে নেমেছেন দখলদাররা। যেসব ঘেরে জাল নামানো হয়েছে সেগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত করছেন মৎস্য দপ্তরের লোকজন। মৎস্য দপ্তরের এমন কর্মকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্রমতে, আত্রাই নদীর উজান অংশ বানডুবি থেকে ভাটি অংশ মিঠাপুর পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে অর্ধশতাধিক অবৈধ মৎস্য ঘের। দখলকারীরা গাছের কাটা ডালপালা নামিয়ে ও বাঁশের বেড়া দিয়ে নদীর প্রায় পুরো অংশ ঘিরে ফেলেছে। এতে নদীর প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘেরগুলোতে কচুরিপানা দিয়ে গোটা নদী দখল করে নেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, এসব ঘের তৈরির কারণে নদীতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে মাছ শিকার করতে পারছেন না। ঘেরের আশপাশের এলাকায় জাল ফেলতে বাধা দেয়া হচ্ছে। অনেক সময় নদী দখলকারীদের হাতে লাঞ্ছিতের শিকার হচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় লাঞ্ছিত হওয়ার পরেও কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না তারা।
[caption id="attachment_195374" align="aligncenter" width="960"]
সরজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে এসব ঘেরে জাল নামিয়ে অবৈধ দখলদাররা মাছ শিকার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তবে দখলদাররা দাবি করেন, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই ঘেরে জাল নামানো হয়েছে। কীভাবে তারা অনুমতি পেলেন সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, নদী দখলমুক্ত করতে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেন। সর্বসম্মতিক্রমে নদী দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়াসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরও মৎস্য কর্মকর্তা কেন এবিষয়ে পদক্ষেপ নেননি সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
জানতে চাইলে ম্যানেজ হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, যেসব ঘেরে জাল নামানো হয়েছে সেগুলোতে গিয়ে মাছ মারতে নিষেধ করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে যান।