পাহাড় কেটে বালিমহাল, বিপর্যস্ত পরিবেশ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২০, ০৩:২৮ পিএম

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের আজুখাইয়া মগঘাটা এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। ছবি: ভোরের কাগজ।

বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ছবি: ভোরের কাগজ।

ট্রাকে করে বালি উত্তোলন। ছবি: প্রতিনিধি।
সরকারি জায়গায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের আজুখাইয়া মগঘাটা এলাকায় চলছে পাহাড় কাটা। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে ড্রেজার মিশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালি। একটি সংঘবদ্ধচক্র প্রাকৃতিক বন ও পরিবেশের ক্ষতি করায় ক্ষুব্ধ প্রকৃতি প্রেমীরা।
বুধবার (১১ মার্চ) সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের আজুখাইয়া গ্রামের মগঘাটা এলাকার স্থানীয় লোকজন এই অভিযোগ করেন। বিশালকৃতির পাহাড়কে কেটে কেটে বিনষ্ট এবং ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উঠিয়ে বালির মহাল বানানো হচ্ছে। এতে বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক নিরাপত্তা। অতি বৃষ্টিতে এ পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী অংশগুলোর ধসে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
[caption id="attachment_208191" align="aligncenter" width="700"]
বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘুমধুম ইউনিয়নের ২৭১নং এবং তুমব্রু মৌজার ১৬৭১, ১৬৪৫ ও ১৬৪৩ নং দাগের আন্দরে আলহাজ্ব ইয়াহিয়া নামের ২০ একর লিজ প্লট রয়েছে। প্লটে সৃজিত বাগানে বিশাল পাহাড় ধ্বংস করা হচ্ছে। ড্রেজার মিশিন বসিয়ে ১০ থেকে ২০ জন শ্রমিক দিয়ে রাতে দিন বালি তুলছে কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি ডাম্পার (গাড়ি) ভর্তি মাটি ও বালি সরকারের উন্নয়ন কাজের নাম ভেঙে যাচ্ছে ইটভাটায়।
সংরক্ষিত ইউপি মহিলা মেম্বার ফাতেমা বেগম জানান, মগঘাটা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় লোকজন পাহাড় ও টিলা কেটে গাছপালা উজার করছে। মেশিন বসিয়ে রাতদিন বালি উঠিয়ে পাহাড়ের সবুজ প্রকৃতিকে এভাবে ধ্বংস করা হলে ঘুমধুম সীমান্তে গাছ-গাছালির সৌন্দর্য আর থাকবে না। এখন পাহাড় কাটা বিষয়টি প্রভাবশালীর একটি সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয় কেয়ারটেকার সাধন বড়ুয়া বলেন, এখানে প্রায় দুই মাস ধরে কোদাল দিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে একটি মেশিন বসিয়ে বালি উঠিয়ে মজুদ করছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। তারা পাহাড় ধ্বংসে মেতে উঠেছে। সৃজিত প্লটে কেয়ারটেকার হিসেবে আমি পরিবেশ ধ্বংস হতে দেখে পাহাড় কাটা ও বালি উঠানোর কাজে বাধা দিলে তারা আমাকে উল্টো মামলা দেয়ার হুমকি দিয়েছে। হুমকি কারণে, ভয়ে এবং আতঙ্কের মধ্যে আছি। নির্বিচারে বালি উঠানো বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
[caption id="attachment_208223" align="aligncenter" width="600"]
ট্রাকে করে বালি উত্তোলন। ছবি: প্রতিনিধি।[/caption]
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরেরর সহকারি পরিচালক একেএম শামীমুল আলম খুরশি বলেন,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতীত কেউ পাহাড় কেটে বালি উত্তোলন করে থাকলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনা স্থলে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক নেতা বলেন, যে জায়গায় পাহাড় কেটে বালি উঠানো হচ্ছে এটি সরকার থেকে লিজ নিয়ে সৃজিত বাগান করার জন্য। দীর্ঘদিন ভোগদখলের সূত্রে এ ঘুমধুম এবং তুমব্রু মৌজার কিছু ভোগদখলকারী মানুষ আইনের ফাঁক ফোকরে সরকারি জায়গার জাল কাগজপত্র বানিয়ে নিজের জায়গা বলে দাবি করছে। তারা পরিবেশ বিপর্যয় চালিয়ে যাচ্ছে।

