ধর্ষিতাকে চরিত্রহীন গালি দেয়ায় আত্মহত্যা!

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২০, ১১:৩৭ পিএম

আত্মহত্যাকারী ছাত্রীর স্বজনদের কান্না। ছবি: প্রতিনিধি।
বছর দুয়েক আগের ঘটনা। বড় মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে মা তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকায় নিয়ে যান। দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট মেয়েকে রেখে যান প্রতিবেশীর বান্ধবীর বাড়িতে। রাতের বেলায় ছোট মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়লে এক যুবক তাকে কৌশলে তাকে ধর্ষণ করে।
ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সেই ঘটনার দুই বছর পর গত রোববার (২২ মার্চ) ধর্ষকের পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে চরিত্রহীন বলে গালাগালি করলে রাগে অভিমানে মেয়েটি নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নীলগুন গ্রামে। আত্মহত্যা করা মেয়েটির নাম স্বপ্না কবিরাজ (১৪)। সে নীলগুন গ্রামের মালদ্বীপ প্রবাসী বিপুল কবিরাজ ও লাবনী কবিরাজ দম্পতির মেয়ে এবং স্থানীয় ভেদরগঞ্জ প্রতিভা সাইন্স প্রিপ্রারেটরি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় সোমবার (২৩ মার্চ) দুপুরে নড়িয়া থানায় মামলা করেছেন নিহতের মা লাবনী কবিরাজ।
স্থানীয় ও নড়িয়া থানায় মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর নড়িয়া লাবণী কবিরাজের বড় মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ছোট মেয়ে স্বপ্নাকে প্রতিবেশি সুশীলের মেয়ে প্রাপ্তি বাছার ও তার বান্ধবী জিতুর কাছে রেখে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যান লাবনী।
ওই রাতে বাড়ির এক কক্ষে ঘুমাতে যায় স্বপ্না। রাত ১২টার দিকে ওই বাড়ির ছেলে সুজিত (৩০) স্বপ্না কবিরাজকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। স্বপ্না ভয়ে পরিবার ছাড়া আর কাউকে কিছু বলেনি। প্রায় দুই বছর পর রবিবার দুপুরে সুজিতের ভাই, ভাবি ও বোন মিলে স্বপ্নাকে ডেকে নিয়ে আসে। তাকে চরিত্রহীন বলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। পরে স্বপ্না লজ্জায়, ঘৃণায় বাড়িতে গিয়ে বিকেলে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তর জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
স্বপ্নার মা লাবনী কবিরাজ বলেন, সুজিতের ভাই অজিত, রিনা ও পারুল আমার ছোট মেয়েকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে বলে, তুই নাকি বিভিন্ন লোকজনের কাছে আমাদের বদনাম বলিস। তুই তো নষ্টা, চরিত্রহীন, তোর স্বভাব চরিত্র ভালো না, তুই বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম করে সুজিতের দোষ দিস। তুই গলায় দঁড়ি দিয়ে মরতে পারিস না। তুই মরলে এলাকা ভালো থাকবে। ওদের কথাগুলো শুনে সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে। এর আগে সুজিত আমার মেয়েকে ধর্ষণও করেছিল।
নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, স্বপ্নার আত্মহত্যার ঘটনায় লাবনী কবিরাজ থানায় মামলা করেছেন। মামলার আসামি অজিত বাছার ও তার মা পারুল রানীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।