উত্তরাঞ্চলে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ : খামারিরা চিন্তিত

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২০, ১০:১৫ এএম

ফাইল ছবি
রংপুরসহ উত্তরের জেলাগুলোতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। এ রোগ এতদাঞ্চলের খামারি ও কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। কুরবানির ঈদের আগে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় নিজ খামারে পালন করা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপপরিচালক ডা. হাবিবুল হক জানান, গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগে সাড়ে ১৭ হাজারের বেশি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আর ৫৩টির মতো বাছুর মারা গেছে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ কুরবানির জন্য কোনোক্রমেই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না।
তিনি জানান, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর চামড়া ফুলে গোটার সৃষ্টি হয়। পরে এসব গোটা ফেটে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘায়ের মতো হয়ে যায়। এরপর আক্রান্ত পশুর গায়ে জ¦র আসে। এক সময় পশুটি দুর্বল হয়ে ওজন হারায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যায়। আক্রান্ত বাছুরের মৃত্যুঝুঁকি বেশি বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মশা-মাছির মাধ্যমে এটি ছড়াচ্ছে বলে জানায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তবে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার মাধ্যমে ১২-১৫ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে ওঠে।
ডা. হাবিবুল হক জানান, গরুর লাম্পি স্কিন রোগ প্রতিরোধে রংপুর অঞ্চলে দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। এই টিমের মাধ্যমে বিনা পয়সায় টিকা, ওষুধ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আক্রান্ত অঞ্চলে বিলি করা হচ্ছে সচেতনতামূলক লিফলেট। অপ-চিকিৎসা রোধ ও বেশি দামে গবাদি পশুর ওষুধ বিক্রি বন্ধে গঠন করা হয়েছে মোবাইল কোর্ট।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দীন গত বুধবার লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত রংপুর বিভাগের বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি অনেক চাষি ও খামারির সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর ও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সচেতনতামূলক বৈঠক করেন। এ সময় বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপপরিচালক ডা. হাবিবুল হক তার সঙ্গে ছিলেন।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ৮ জেলায় নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত গরুর খামারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার। প্রতিটি খামারে ৫-২০টি পর্যন্ত গরু রয়েছে।
শুধু রংপুর জেলায় খামার রয়েছে ৩ হাজার ১৪৯টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত রয়েছে ১ হাজার ৩২৮টি।
লাম্পি স্কিন রোগে ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় ২০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায়, জেলার ৫টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ২১৮টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫টি গরু। টিকা প্রদান করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৫০০টি গরু। এ রোগ জেলার সব উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় গরু খামারিরা।
দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে. দিনাজপুরে লাম্পি স্কিন রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন চাষিসহ খামারিরা। ইতোমধ্যে এ রোগে প্রায় ৩ হাজার গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে। সরকারিভাবে ১২টি বাছুর মারা গেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২২টি ইউনিয়নকে আক্রান্তপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। এজন্য একজন চিকিৎককে প্রধান করে ৩ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করে ২২টি টিমকে মাঠে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় ১৬ লাখ ৭১ হাজার ২১৪টি গবাদি পশু রয়েছে।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় প্রায় ২ সপ্তাহ আগে কয়েকটি ইউনিয়নে বেশ কিছু গরুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়। এখন বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ২ শতাধিক গবাদি পশু উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলায় ১ লাখ ২২ হাজার গরুর মধ্যে ১৩৪টি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার রামদাস ধনিরাম গ্রামের কৃষক রোস্তম আলী জানান, তার একটি গাভি ও ৩টি বকনা বাছুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি বাছুর মারা গেছে। এছাড়া ওই উপজেলার আরো কয়েক জনের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।