অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুমদ্বীপের লোকালয়ে হরিণ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০, ০৯:২২ এএম

নোয়াখালীর হাতিয়ায় টানা বর্ষণ আর জোয়ারের পানি থেকে জীবন বাঁচাতে লোকালয়ে এসেছে অনেক হরিণ। ছবি: ভোরের কাগজ।
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর অমাবস্যার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধবিহীন হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন নিঝুমদ্বীপ প্লাবিত হয়েছে। বনের ভেতর ৫ ফুট পানি, কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তাই জীবন বাঁচাতে লোকালয়ে ভেসে এসেছে অনেক হরিণ। এই হরিণসহ নিঝুমদ্বীপের পর্যটন সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিচ্ছিন্ন নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন আইলা, সিডর ও আম্ফানের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক দিনের ভরা বর্ষায় অমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উপর দিয়ে যাওয়ায়, মানুষের মতো বনে বসবাসকারী হরিণের জন্যও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অস্বাভাবিক জোয়ার।
নিঝুমদ্বীপের বনপ্রহরী বাছির উদ্দিন (৫৫) বলেন, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসতে ভাসতে হরিণের পাল ছোয়াখালী এলাকা দিয়ে বন্দরটিলা-নামার বাজার প্রধান সড়কের ওপরে চলে আসে। এ সময় অনেক হরিণকে কুকুর ও শিয়ালের আক্রমণের শিকার হতে দেখা যায়। রাতে জোয়ার হলে একইভাবে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেয়া হরিণের পালকে কুকুর ও শিয়াল আক্রমণ করে।
নিঝুমদ্বীপ জাতীয় উদ্যান রক্ষায় গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ডাক্তার বেলাল উদ্দিন জানান, নিঝুমদ্বীপে বনের মধ্যে চৌধুরী ক্যাম্প এলাকায় ১৯৮২ সালে একটি মাটির কিল্লা তৈরি করা হয় হরিণের জন্য। বিভিন্ন সময় প্লাবনে সেটি অনেকটা সমতলের সঙ্গে মিশে গেছে। এটি এখন আর হরিণের আশ্রয়ে কাজে আসে না। বর্তমানে বনের ভেতর বন বিভাগের তৈরি করা কয়েকটি পুকুর ও পুকুরের পাড় ছাড়া অস্বাভাবিক জোয়ারে হরিণের আশ্রয় নেয়ার মতো কিছুই নেই।
নিঝুমদ্বীপে পর্যটন নিয়ে কাজ করা দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম বলেন, ২০১২ সালে কয়েকটি এনজিওকে সঙ্গে নিয়ে নিঝুমদ্বীপের হরিণের ওপর একটি সার্ভে করা হয়। এতে আমরা এ দ্বীপের হরিণকে বাঁচাতে হলে চারটি বিষয়ে কাজ করার বিষয়ে সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেই। এতে আমরা যে বিষয়গুলো উল্লেখ করি তা হলো- উঁচু জায়গা নির্মাণ, কুকুর নিধন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও বনের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা।
নিঝুমদ্বীপের বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় এ বছর অমাবস্যায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে, সঙ্গে ভেসে এসেছে হরিণের দল। এভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার অব্যাহত থাকলে নিঝুমদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ হরিণের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
নিঝুমদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান জানান, বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য বারবার উপজেলা সমন্বয় সভায় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। পর্যটন এলাকা নিঝুমদ্বীপের হরিণ বাঁচাতে হলে বেড়িবাঁধ এবং উঁচু মাটির কিল্লা নির্মাণ করা দরকার। হরিণ হারিয়ে গেলে পর্যটনশূন্য হয়ে পড়বে নিঝুমদ্বীপ।