সুন্দরগঞ্জে বার বার থেমে যাচ্ছে মডেল মসজিদের কাজ

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৮:৫৯ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
মসজিদ আল্লাহর ঘর ও মুসলিমদের প্রাণকেন্দ্র। তাই মসজিদ নির্মাণ এবং তা সংরক্ষণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ইসলামে। আর এ কারণেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করার। ২০১৭ সালে এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন সরকার। এ প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে অর্ধেকেরও বেশি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ জটিলতা ও বাঁধার মুখে বার বার থেমে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর বুধবার (১৫ মে) সকালে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হলে স্থানীয় কয়েকজন অনুপ্রবেশকারীর বাঁধার মুখে আবারো নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের পূর্ব বাইপাস মোড়ে পুরনো মসজিদে দানকৃত সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমির সঙ্গে আরো ৪৮.৫ শতক জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের ১১ জুনে যথারীতি টেন্ডারও আহ্বান করে গাইবান্ধা গণপূর্ত অধিদপ্তর। মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৯০ টাকা। মুক্তা কনভয় সার্ভিস যেভি প্রকল্পের কাজটি টেন্ডারের মাধ্যমে পান এবং কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর যথাসময়ে কাজ করার লক্ষ্যে প্রকল্প সাইটে কাজের দ্রব্যসামগ্রী মজুদ করে কাজ শুরু করেন। এতে নানা জটিলতা ও বাঁধার মুখে কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। ইতোমধ্যে রড সিমেন্টসহ দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিশাল অংকের টাকার ক্ষতি হবে বলে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপরে গণপূর্ত বিভাগ সব জটিলতা শেষ করে পুণঃদরপত্র আহবান করলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এস এস এল-কনভয় যেভি প্রকল্পের কাজটি প্রাপ্ত হন। পুনঃদরপত্রে ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৫ হাজার ৩০ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরে গত ২২ এপ্রিল তারিখে ঘঙঅ (কার্যাদেশ) প্রদান করা হয় উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।
আরো পড়ুন: অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষিকার দুর্ব্যবহার, ক্লাস বর্জন
কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করলে প্রকল্পের কার্যস্থলে অনুপ্রবেশকারী ও পিছনের কিছু অদৃশ্য শক্তি সরকারে ভাবমুর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে বার বার বাঁধার সৃষ্টি এবং চাঁদা দাবি করে। নির্মাণ কাজে বাঁধা প্রদানকারী মোস্তাফিজুর রহমান সরকার খোকনসহ কয়েকজন অহেতুক জমির মালিক দাবি ও চাঁদা দাবিসহ কাজে বাঁধার সৃষ্টি করে।
গাইবান্ধা ইসলামি ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গোলাম মর্তুজা বলেন, জমি অধিগ্রহণ করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইসলামি ফাউন্ডেশনের নামে গেজেট মূলে খারিজ করা হয়। এই জমির মালিক ইসলামি ফাউন্ডেশন এবং জমি আমরা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে গাইবান্ধা গণপূর্ত অধিদপ্তরে হস্তান্তর করি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (এস এস এল-কনভার যেভি) ঠিকাদার মাহমুদুন নবী মুরাদ জানান, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করি। কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী নির্মাণাধীন মালামাল তছরুপ করার জন্য বার বার বাঁধাপ্রদানসহ চাঁদা দাবি করে নির্মাণ কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি তিনি ইতোমধ্যে ঘটনা স্থান পরিদর্শন করে কাজ করার নির্দেশনা দেন। আবারও গত বুধবার নির্মাণ কাজ শুরু করলে আমার শ্রমিকদের দেশিও অস্ত্র দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। আমি কয়েকজনের নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলও শাখা থেকে প্রদান করা হয়। সরকারি গেটেজ অনুযায়ী জমি মালিক ইসলামি ফাউন্ডেশন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি জমিটি ফাঁকা করে দেয়ার জন্য এবং আমি ঘটনাস্থান পরিদর্শন করি ও কয়েকজন অনুপ্রবেশকারীকে নিভৃত করার চেষ্টা করি।