অচল অবস্থায় রাবির ৯ বাস, সংস্কারে উদ্যোগ নেই প্রশাসনের

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ০২:১৮ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৯টি বাস। যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। দিন দিন নষ্ট হচ্ছে যাতায়াতের অন্যতম এই বাহনগুলো। এসব সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। অন্যদিকে পর্যাপ্ত বাসের অভাবে নিয়মিত ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে নতুন বাস ক্রয় করে ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তাদের।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, অযত্ন ও অবহেলায় বাসের ইঞ্জিনসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তাই পুরাতন এই বাসগুলো বিক্রি করে নতুন বাস কেনা উচিত। এতে করে, কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে। অন্যদিকে পরিবহন দপ্তর বলছে, পুরাতন বাস বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম চালক থাকায় নগরীর সকল রুটে পর্যাপ্ত বাস দিতে পারছেন না তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের পেছনে তিনটি ও পরিবহন স্ট্যান্ডে ছয়টিসহ মোট নয়টি বাসের নাজেহাল অবস্থা। দীর্ঘদিন অচল হয়ে পড়ে থাকায় কোনো কোনো বাসের ইঞ্জিন ও চাকাগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু গাড়ির ফিটনেসও ভেঙে পড়েছে। সেগুলো এখন বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়ার ‘বিলবোর্ডে পরিণত হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই পরিত্যক্ত এ বাসগুলোতে নিয়মিত বসে মাদকের আসর।
পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাস রয়েছে ৩০ টি। এর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য ট্রিপ রয়েছে ২৪ টি। এসব পরিবহন নগরীর ১৮টি রুটে চলাচল করছে। বাসগুলো পরিচালনার জন্য চালক প্রয়োজন ৬০ জন। কিন্তু বর্তমানে চালক রয়েছেন মাত্র ২২ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদুর রহমান বলেন, পুরাতন বাসগুলোকে বিক্রি করেলে একটা মোটা অঙ্কের টাকা পেতো প্রশাসন। সেই অর্থ দিয়ে নতুন বাস ক্রয় করে বাসের ট্রিপের সংখ্যা বাড়ালে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হতো না।
ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় পর্যাপ্ত বাস নেই। আমরা যদি দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বাস অপেক্ষা করে। কিন্তু আমাদের বাসগুলো একই সময়ে ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে আবার ক্যাম্পাসে ফেরত আসে। এতো করে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হয়। এই সংকট কাটাতে পুরাতন বাসগুলো বিক্রি করে নতুন বাস ক্রয়ের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, পরিত্যক্ত বাসগুলো এভাবে ফেলে না রেখে বিক্রি করে নতুন বাস ক্রয় কিংবা চলাচল উপযোগী করলে ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি কমে আসতো। এই বাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ, ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পদ। তাই আমি চাই প্রশাসন যেন এদিকে দৃষ্টি দেয়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহণ দপ্তরের প্রশাসক ড. মোকছিদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সম্পদ বিক্রি করতে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে। আমরা চাইলেই পুরাতন বাসগুলো বিক্রি করতে পারি না। প্রথমে সেগুলোকে বাজেয়াপ্ত দেখাতে হয়। তারপর বিক্রির প্রক্রিয়াতে যেতে হবে। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। আর পরিবহন দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে রয়েছে। যে বাসগুলো এখন সচল আছে ওই বাসগুলোর জন্য পর্যাপ্ত চালক নেই। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করবো।