জাল সনদে ১৭ বছর পুলিশে চাকরি, পান এএসআই পদে পদোন্নতি!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ১২:৪৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত
জাল সনদে চাকরি নিয়ে ১৭ বছর ৫ মাস ১৬ দিন চাকরি করেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আল মামুন। কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হয়েছিলেন কিন্তু জাল সনদে চাকরি নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে রোগী সেজে পুলিশের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন এই পুলিশ সদস্য। তবে পুলিশ বিভাগ থেকে অবসরকালীন আর্থিক সব সুবিধা নিয়েছেন তিনি।
এদিকে নিজেকে অক্ষম ঘোষণা করে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিলেও এখন তিনি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী বনে গেছেন। ভুয়া সনদ দেখিয়ে ২০০৩ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়েছিলেন মামুন। এ পুলিশ কর্মকর্তা চাকরিকালে কামিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
জানা গেছে, আল মামুনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়নের উমরপুরে। বাবা মফিজ উদ্দিন শ্যামপুর ইউপির ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। আল মামুন এখন আওয়ামী লীগ করেন। ২১ মে অনুষ্ঠিত শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে তিনি ভাইস-চেয়ারম্যান পদে টিয়া পাখি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
মামুন মনোনয়নপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস উল্লেখ করেন। ৩০ এপ্রিল মোহা. ওলিউল্লাহ রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করেন তার এসএসসির সনদ জাল। তবে রিটার্নিং অফিসার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
আরো জানা গেছে, মামুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। চাকরিতে যোগদানকালে তিনি গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ী আল ইসলাহ ইসলামী একাডেমি থেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০০১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে উত্তীর্ণের সনদ প্রদর্শন করেন।
এদিকে ৬ মে আল ইসলাহ ইসলামী একাডেমির প্রধান শিক্ষক তারেক আহমেদ অনিক রেকর্ডপত্র যাচাই করে নিশ্চিত করেন ২০০১ সালে তার প্রতিষ্ঠান থেকে এ নামের কোনো শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় নেয়নি। এ প্রশংসাপত্রটিও তারা দেননি।
এদিকে পুলিশ বিভাগের সার্ভিস রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খুলনা পুলিশ লাইনে কনস্টেবল হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন আল মামুন। এরপর ২০১৭ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি লাভ করেন। বিভিন্ন জেলায় চাকরির পর ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় অবসার নেন। জানা গেছে, চাকরি জীবনে আল মামুন জাতিসংঘের সুদান মিশনে একবার দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র জানায়, কোন থানায় কোন ওসি পোস্টিংয়ে যাবেন কাকে কোথায় বদলি করা হবে। ১০ বছর মামুন এসব করেছেন।
জানা গেছে, নির্বাচনী হলফনামায় মামুন টিনশেড বাড়ির কথা বললেও গ্রামের বাড়ি উমরপুরে তৈরি পাকা বাড়ির কথা গোপন করেছেন। রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর এলাকায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর থাকা কয়েক কোটি টাকার বাড়ির তথ্যও চেপে গেছেন। মামুন এলাকায় কিনেছেন জমি ও বাগান। সোনামসজিদ বন্দর এলাকায় জমি কিনে করেছেন কয়লা ও পাথরের ইয়ার্ড। তিনি আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স করে ভারত থেকে পাথর আমদানি করেন। হলফনামায় তিনি বছরে ১২ লাখ টাকা আয় করেন বলে দাবি করেছেন। উত্তরা ব্যাংক থেকে ২৯ লাখ টাকা ঋণ থাকার কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। আয়ের উৎস দেখিয়েছেন ব্যবসা।