ঘূর্ণিঝড় রেমাল: নোয়াখালীতে ৭৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ০৯:১৩ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাতিয়া উপজেলায় প্রায় ৫২ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে হাতিয়ার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে প্রায় চার হাজার কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে জোয়ারে প্লাবিত এলাকাগুলোয় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
সোমবার (২৭ মে) ঝড়ে বিকেল পর্যন্ত কোথাও কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে রবিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে জেলা শহর মাইজদীসহ জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় লোকালয়ে মোবাইল, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পর্যবেক্ষক) রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নোয়াখালী জেলাজুড়ে সোমবার ভোর থেকে থেমে থেমে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বাতাসের গতি নির্ধারণের ব্যবস্থা না থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে বাতাসের গতি নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। এ ছাড়া সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিষ চাকমা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে হাতিয়ায় ৫২ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো নিঝুম দ্বীপ। সেখানকার বেশির ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে পুরো নিঝুম দ্বীপ ৪-৫ ফুট পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুখচর, নলচিরা, চরকিং, তমরুদ্দি ও চর ঈশ্বর ইউনিয়নও।
আরো পড়ুন: পাইকগাছায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী, ক্ষয়ক্ষতি কোটি টাকার
তিনি জানান, ঝড়ের পরবর্তী সময়ে ঝোড়ো হওয়া ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কোনো এলাকা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
হাতিয়ার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সোমবার সকালে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে তার সংসদীয় এলাকা নিঝুম দ্বীপের প্রায় ৯ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ১০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার প্রায় ৬০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব কটি মাছের খামার ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঢাল চরের চার হাজার পরিবার জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক কাঁচাবাড়ির ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি চর ঘাসিয়ায় বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চানন্দি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে চার হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ৫০০ কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার পর সোমবার সকাল থেকে প্রচণ্ড বেগে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুবর্ণচরের বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বেড়িবাঁধ ভেঙে চরজুবলি ও চরজব্বর ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোথাও কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন: ঝালকাঠিতে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নদী তীরের বাসিন্দাদের
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিন সরকার বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝোড়ো বাতাসে সুবর্ণচরের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। তিনি ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে পাঠিয়ে গাছ কেটে চলাচল স্বাভাবিক করছেন। এ ছাড়া ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতি হতে পারে। তবে ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় এবং রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় কোথাও যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে কারণে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত কোনো তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, সদর উপজেলার আন্ডারচর, কালাদরাপ, নোয়াখালী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ৩ হাজার ৩২৮টি বাড়িঘর আংশিক এবং ২৮টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।