×

সারাদেশ

রেমালে নিঃস্ব চরবাসীর মুখে জুটবে না কোরবানির গোস্তো!

Icon

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০১:৩২ পিএম

রেমালে নিঃস্ব চরবাসীর মুখে জুটবে না কোরবানির গোস্তো!

ছবি: সংগৃহীত

   

ঈদের আনন্দ বইতে শুরু করলেও মূল ভূখণ্ড থেকে সাগর মোহনায় বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন ঢাল চরসহ একাধিক চরাঞ্চলে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো পরিবার। এসব চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নদী ভাঙন আবার কখনো হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটায় চরের মানুষেরা।

কিছুদিন আগের ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলীয় চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢাল চর, চর মোতাহার, চর মানিকা, কলমি, চর কুকরী মুকরি ও তেতুঁলিয়ার পাড়ের মজিবনগর চরসহ প্রায় ২০টি চরে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফিটের বেশি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

জোয়ার ও বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো দুর্ভোগ কমেনি ক্ষতিগ্রস্ত চরগুলোতে। চরগুলোর ভাঙা অংশের সঙ্গে নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানির সংযোগ তৈরি হয়েছে। জোয়ারের সময় ফসলি জমি ও পথঘাট লবণ পানিতে ভেসে যাচ্ছে বলে জানা যায়।

এসব চরের মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ নেই। প্রতিদিনের মত পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দিতেও যেন সংগ্রাম করতে হয় তাদের। অনেকে বাচ্চাদের নতুন পোশাকও কিনে দিতে পারেনি এই কোরবানিতে। ঈদের দিনও হয়তো তাদের কপালে জুটবে না গোস্তো। ভালো খাবারের পরিবর্তে হয়ত খেতে হবে ভর্তা আর ডাল-ভাত। চরের বাসিন্দাদের মনে এখন একটাই চিন্তা জীবন আগে বাঁচাতে হবে। আর সেই লড়াইয়ে এখন ব্যস্ত সবাই। সারাদেশে ঈদের আনন্দ লাগলেও এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫৫হাজার মানুষের চোখে-মুখে নেই ঈদের আনন্দ। রেমালের তাণ্ডবে চরফ্যাশনে  উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ছয় হাজার বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে। 

আরো পড়ুন: কুমিল্লায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২

এদিকে, গত দুই-তিন বছরে নদীর অব্যাহত ভাঙনে বসত-বাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতেই ব্যস্ত। আবার এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত। 

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ও নদী ভাঙনকবলিত মানুষের মাঝে ঈদের আগেই সহযোগিতা করা হয়েছে। 

রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙনকবলিত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের সুখদুঃখের কাহিনি। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে চরে বসবাস করেন রেনু বেগম। স্বামী মিয়ার চরে গেছেন এক আত্মীয়ের কাছ থেকে চাল আনার জন্য।  

রেনু বেগম বলেন, ‘আংগো ঘর-বাড়ি-জিনিসপত্তর কিচ্ছু নাই। খালি ভিটা পইরা আছে। এক কাপড়ে আইজকা সাত দিন। হ্যাগোর (ছেলে-মেয়ের) বাফে (বাবা) গাঙ্গে যাইতে পারে না। চাল টোকাইতে গ্যাছে আরেক চরে। সরকার আংগো (আমাদের) কিছু দেয় না। মাঝে মাঝে মানষে চিড়া, মুড়ি, চিনি দিয়া যায়। হেইয়্যা খাইয়া আছি।’

তিনি বলেন, ‘বন্যার দিন পোলাডা ভাইস্যা গ্যাছিল, লগে আমিও। যেরুম হউক হাতরাইয়া-মাতরাইয়া উডলাম। ওইদিনকার থেইকা ভাত খাওয়া বন্ধ। পোলাডা কান্দে ভাতের জন্য। কিন্তু মুই কি হরমু। মোরতো হাতে কোনো কামনাই।’

জরিনা বেগম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘মোগো আর কিছু নাই। কোস্টের (কোস্ট ফাউন্ডেশন) বিল্ডিং না থাকলে মোরাও ভাইস্যা যাইতাম। এহন হউর-হাউড়ি (শ্বশুর-শাশুড়ি), পোলা-মাইয়্যা লইয়্যা পাঁচজন আছি শুধু। ঘরে ভাত নাই, পেন্দনের (পড়ার) মতো কাফুর (পোশাক) নাই। এক কাফুরেই আছি। সরকার মোগো এক মুঠ চাউলও দেয় নাই এহনো।’

ঈদের দিনের কথা বলতেই এভাবে ক্ষোভ আর দুঃখের কথা জানালেন গৃহবধূ সেলিনা (৩৫)।

তিনি বলেন, ‘১২গন্ডা (১১২শতাংশ) জমি ছিলো, পুকুর ছিল, হাস-মুরগী আর গরু-ছাগল ছিল। এখন আর কিছুই নেই। নদীতে ৬ ভাঙ্গা দিয়েছে তারপরও ছিলাম, এবারের ঘূর্ণিঝড়ের সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। আমাদের আবার ঈদ আনন্দ কীসের? ঘূর্ণিঝড় গেছে এখন নদী তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এখন কোথায় আশ্রয় নেই সেই চিন্তায় আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের দপ্তর থেকে ঈদ উপলক্ষে ঈদ বস্ত্র বিতরণ হলেও আমরা পাইনি, এই যে ঈদ আসছে,  চারদিকে হাসি আনন্দ আর উৎসব। কিন্তু আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা কেউ শোনেনা।’

ঢাল চর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম পাটওয়ারী জানান, ‘ঢাল চর ইউনিয়নটি বন্যায় প্রায় সবটুকুই বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। সাগরে শতশত গবাদিপশু ভেসে গিয়েছে। মানুষের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে সমুদ্রে। মানুষ খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে ঢালচরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো ত্রাণ সামগ্রী আমাদের চরে এসে পৌঁছেনি।’

বর্তমান ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পর ঢাল চরের মানুষ এক কথায় না খেয়ে আছে। শত শত পরিবার তাদের সহায়-সম্বল হারিয়েছে। অথচ আমাদের কেউ খোঁজখবর নিতেও আসে না। কোনো সহায়তাও আসে না। মানুষগুলো খাবারের জন্য হাহাকার করছে।’ ইউপি চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদার বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ঢালচরে এখনো কোনো সহায়তা আমরা পাইনি। বিভিন্ন সময়ে চিড়া, মুড়ি, চিনি বা এক বেলা খিচুড়ি নিয়ে আসেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সেগুলো অল্প কিছু বাসিন্দার মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এখানকার মানুষ খাবার, বাসস্থান ও পানির সংকটে ভুগছে। এছাড়া গত দেড় মাস ধরে নদী ভাঙনের কবলে বসতবাড়ি হারিয়েছে শতাধিক পরিবার। নদীতে চলে গেছে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও শতশত হ্যাক্টর ফসলি জমি।’

ঘূর্ণিঝড়ের পর বর্তমানে ঢাল চরের মানুষের নিজেদের বাড়ি-ঘর নাই বললেই চলে। বেশির ভাগ মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই ঈদুল আজহায় আনন্দ তাদের মনে আর দাগ কাটছে না। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App