ময়নাতদন্ত ছাড়া জল্লাদ শাহজাহানের মরদেহ দেবে না পুলিশ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৯:০৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিসহ মোট ৬০ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। সোমবার (২৪ জুন) ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সোমবার বিকেলে ‘জল্লাদ’শাহজাহানের বোন ফিরোজা বেগম তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
তবে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোরে মৃত্যু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের খামখেয়ালিপনায় রাত ১০টার পার হলেও মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হতে পারেননি তারা। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, শাহজাহানের মৃত্যু স্বাভাবিক হলেও ময়নাতদন্ত করতে পুলিশ তাদের হয়রানি করছে।
এদিকে, জল্লাদ শাহজাহানের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় এলাকার অনেকেই তাকে তেমন চেনেন না। তবে স্থানীয় কয়েকজন ও কিছু সংখ্যক আত্মীয়-স্বজন দাফনের কাজ সম্পন্ন করতে পারিবারিক কবরস্থানে কবর খোদাইয়ের কাজ করছেন। মরদেহ এলেই গোসল করিয়ে দাফন করার জন্য প্রস্তুত তারা।
আরো পড়ুন: কারামুক্ত জীবনে যেসব আক্ষেপ ছিল জল্লাদ শাহজাহানের
এক প্রতিবেশী যুবক বলেন, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান এলাকায় তার বোনের বাড়িতে এসেছিলেন। সেসময় আমরা তাকে দেখেছি। দুপুরে শুনেছি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগছে।
ভাগনে মহসিন মিয়া বলেন, শাহজাহান আমার চাচাতো মামা হয়। এক বছর আট মাস হয়েছে উনি জেল থেকে বেরিয়েছেন। তিনি ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা কবর খোদাই করছি, মরদেহ নিয়ে এলে দাফন সম্পন্ন করব।
মরদেহের সঙ্গে থাকা প্রতিবেশী আলমগীরের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, শাহজাহানের মৃত্যুর খবর পেয়ে উনার বোন ফিরোজাকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। এসে মরদেহ ভালোভাবে দেখি। যতদূর দেখেছি শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা কোনো কিছুই নেই। তবুও শেরেবাংলা নগর থানা কর্তৃপক্ষ আমাদের এক প্রকার হয়রানি করছে। তারা বলছে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দেয়া যাবে না। তারা থানায় আমাদের দুই-তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে কোনো ধরনের সমাধান দিতে পারেনি। আমাদের আবার এখন সাভার থানায় পাঠিয়েছে। আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত চাই না।
প্রতিবেশী আলমগীরের কাছে শাহজাহানের মৃত্যুর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কী বলছে এমন প্রশ্ন করলে জবাবে বলেন, আমরা ডাক্তারকে খুঁজে পাচ্ছি না।
আরো পড়ুন: যেভাবে জল্লাদ শাহজাহানের উত্থান
এ ব্যাপারে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মশিউরের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে সাভার থানায় পাঠিয়েছি। সেখানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন জল্লাদ শাহজাহান। সেখানে সোমবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে তার বুকে ব্যথা ওঠে। পরে ভোর ৪টার দিকে বাড়ির মালিক রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জল্লাদ শাহজাহান ১৯৭৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় তার ১৪৩ বছরের সাঁজা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং বাকি ৩৪টি হত্যা মামলা। পরে ৮৭ বছরের জেল মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য সাঁজা দেয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাঁজা ৪৩ বছরে এসে নামে। অবশেষে ৪৪ বছর জেল খাটার পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কারামুক্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফেলার সুযোগ পান জল্লাদ শাহজাহান।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্ম নেন শাহজাহান ভূঁইয়া। কারাজীবনে মোট ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান। এর মধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, চারজন যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলাভাইসহ দুজন জেএমবি সদস্য এবং আরো ১৪ জন অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।