মধ্যনগরে দ্বিতীয় দফার বন্যা, ফের বেড়েছে পানি

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুুনামগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
দ্বিতীয় দফায় ১২ দিন পর সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের উপজেলা মধ্যনগর বড়ধরনের বন্যার মুখে পড়েছে। পানি নেমে যাওয়া এলাকা আবারো প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও জেলায় একদিনের রেকর্ড বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আগের চেয়ে পানি বেড়েছে ৩২ সেন্টিমিটার।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী-২ ইমদাদুল হক জানান, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমার পানি দুপুরে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে; যা এ জেলায় বছরের রেকর্ড। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এ কারণে আবারো বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান পাউবোর এই নির্বাহী প্রকৌশলী।
মধ্যনগরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার সকাল ৯টা অব্দি উপজেলার প্রধান দুইটি নদী সোমেশ্বরী ও উব্দাখালী নদীর পানি সমতল থেকে ৭.৭২ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিলো। তবে সন্ধ্যা ৬টায় পানি কমে ৬.৫৭ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নুর আলম।
এদিকে দ্বিতীয় দফার বন্যায় আগের চেয়ে বেশী পানি হওয়ায় উপজেলার প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সব রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে নতুন করে ঘর-বাড়িতে পানি ওঠায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র মুখী হচ্ছেন। যদিও প্রথম দফার বন্যায় উপজেলায় ৬০টি আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ উঠেনি।
আরো পড়ুন: বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সাজেকের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ
উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে হওয়া বন্যায় আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আগের বন্যার পানি এখনো নামেনি, আবারো পানি বেড়েছে। এখন আগের চেয়ে পানিও বেশী হয়েছে। এ যেনো ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

একই ইউনিয়নের বংশীকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা হিরন মিয়া বলেন, ‘বন্যার কারণে আমরা ঈদুল আজহার আনন্দ উপভোগ করতে পারিনি। প্রথমবারের বন্যার পানি আমাদের সর্বশান্ত করেছে। দ্বিতীয় ধাপে আবারো বন্যা। এতে করে আমাদের দুর্দশার কোনো শেষ নেই, এমনটিই মনে হচ্ছে।’
উপজেলার চামরদানী ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর খসরু ও সদর ইউপির চোয়ারম্যান সঞ্জীব রঞ্জন তালুকদার টিটু জানান, দুদিনের ভারি বর্ষণে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখন পানির উপর পানি। আবার ঘরবাড়িতে পানি ডুকেছে। রাস্তাঘাট ডুবেছে। মানুষের কষ্ট বেড়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক ভাবে। তবে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের জনবল ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা জানান, দ্বিতীয় দফায় মধ্যনগরে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলার সবকটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন উঠেনি। পরিস্থিতির অবনতি হলে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।