কুবিতে ছাত্রনেতাকে মারধরের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেত্রীর পদত্যাগ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৫০ এএম

ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমন্বয়কারী ফরহাদ কাউসারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সামনে তাকে মারধর করা হয়।
হামলার ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গিয়েছে মতানৈক্য। ফরহাদ কাউসারকে মারধরের ঘটনায় নুসরাত সুরভী নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
আহত ফরহাদ কাউসার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। হামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন দাশ, উপ-নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল আলম রিয়াজ, ছাত্রলীগ কর্মী আক্তারুজ্জামান পাভেল, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান রাফি, ছাত্রলীগ কর্মী জুনায়েদ লামিম, অর্ণব সিংহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসিফ এনতাজ রাব্বি। এদের অনেকেই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহর গ্রুপের কর্মী। এছাড়া মারধরের সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আগামী কমিটির পদপ্রত্যাশী মেজবাহউল হল শান্ত উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ফরহাদ কাউসারসহ আরো কয়েকজনকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড় করিয়ে মোবাইল চেক করে মারধর করা হয়।
আরো পড়ুন : শহীদুল্লাহ হলের সামনে গুলিবিদ্ধ নিউমার্কেট থানা ছাত্রলীগ নেতা
ওই ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু হল থেকে বেরিয়ে মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খোঁজে ক্যাম্পাস গেটে যান। মারধরকারীদের না পেয়ে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দত্ত হলের দিকে এগুতে থাকেন। তখন শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা উত্তেজিত নেতাকর্মীদের থামাতে চেষ্টা করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও বঙ্গবন্ধু হল প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন।
আহত শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, রাতের বাসে শহর থেকে টিউশনি করে এসে ক্যাম্পাস গেইটে নামি। এরপর আমাকে কয়েকজন ডেকে নিয়ে যান। তারা আমার ফোন কেড়ে নিয়ে লক খুলতে বলেন এবং জানতে চান আমি কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছি কিনা। তারা আমার ফোন চেক করতে থাকা অবস্থায় রবিন দাশ প্রথমে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন। এরপর পাভেল, রাফি, শান্ত, রিয়াজ, রাব্বি আমাকে মারধর করেন।
ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতা এনায়েত উল্লাহ মারধরের বিষয়ে বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি, রাজাকার স্লোগানের পর ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করে। সোমবারও ওদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির হয়েছে। এক পর্যায়ে ওদের একজনের সঙ্গে মারামারি হয়। আমরা তিন হলের সবাই বিষয়টি নিয়ে অবগত রয়েছি। সকলে বসে একটা সমাধানে আসবো।
কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত সায়েম বলেন, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবো, যাতে কেউ বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুবি শাখার সমন্বয়কদের একজন মো. সাকিব হোসাইন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই আজকের সকল কর্মসূচি পালন করেছিলাম। কিন্তু এই যে হামলা সেটিতে আমরা মর্মাহত। পাশাপাশি তার ফোন চেক করা একপ্রকার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন। আমরা এর যথাযথ বিচার চাই।