মধ্যনগরের হাওরাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে মান্দার গাছ

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩১ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
এক সময় সুনামগঞ্জের মধ্যনগরসহ হাওরাঞ্চলে অবহেলায় বেড়ে ওঠা কাঁটাযুক্ত এই গাছটি যত্রতত্র চোখে পড়ত। এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। কালের আবর্তে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মান্দার গাছ। হাওরাঞ্চলে জ্বালানি কাঠ হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার এবং মেহগনি, শিশুসহ আগ্রাসী প্রজাতির গাছের কারণে এ গাছ ধীরে ধীরে হাওরের জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ইটের ভাটায় কাঠের জোগান ও দেশলাই তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে পরিণত বয়সের কাঁটা মান্দার দেখা খুবই দুর্লভ।
জানা গেছে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রজাতির উদ্ভিদের নাম পারিজাত রাখেন।
পৌরাণিক কাহিনি থেকে জানা যায় ‘মান্দার স্বর্গের ফুল। মর্ত্যের রাজা শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের কাছ থেকে অনেকটা জোরজবরদস্তি করেই এই পারিজাতকে তার মর্ত্যের বাগানে এনে লাগান।’ দেখতে যেমন পলাশের মতো তেমনি ফাগুন হাওয়ার পলাশ যখন ডালে ডালে আগুন ঝরায় তখন পারিজাতও ফুটতে শুরু করে। গাছের পাতা ঝরে যায় ফুল ফোটার সময় হলেই। পাতাহীন গাছে ফোটে টকটকে লাল পারিজাত।
মধ্যনগরের বিভিন্ন গ্রামের প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,গ্রামাঞ্চলে ভিটে-বাড়ির ঘেরা-বেড়ার খুঁটি দিতে এ গাছের তুলনা নেই। একবার তৈরি করে দিলে সারা জনম স্থায়ী হয়ে যেতো, যেন জীবন্ত ঘেরা-বেড়া। প্রতিবছর ডাল কেটে লাখড়ির সংস্থান হতো। মান্দার পাতা ছাগলের খুব পছন্দের খাবার। মান্দারের বিচি দেখতে অনেকটা তেঁতুলের মতোই। তেঁতুলের চেয়ে একটু বড় আর গোটা গোটা। তবে মান্দার খুবই নরম কাঠের গাছ হওয়াতে তেমনভাবে কোথাও এর কাঠের ব্যবহার নেই।
আরো পড়ুন: রাজবাড়ীতে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ: নিহত ২
তবে মান্দারের ঔষধি গুণের কথা জানালেন উপজেলার বাট্টা গ্রামের কবিরাজ দীনবন্ধু বিশ্বাস। তিনি বলেন,পেটের পীড়ার নানা রোগ নিরাময়ে কাঁটা মান্দার উপকারী উদ্ভিদ। বিশেষ করে রক্ত-আমাশয় নিরাময়ে এ গাছের ছালের রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে রক্ত আমাশয় উপশম হয়। এছাড়া বাত-ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে মান্দার ফুলের তেল ব্যবহৃত হয়।সিদ্ধ চিকিৎসায় রজঃস্রাব বা মাসিক নিয়মিতকরণ সহ প্রায় ৯টি রোগের ঔষধি গুন রয়েছে মান্দার গাছে।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা তাঁর “ফুলগুলি যেন কথা” বইতে এই মান্দার সম্পর্কে বলেছেন, “ইরিত্রিনা ইণ্ডিকা বা পরিজাত মাঝারি আকারের দেশী গাছ। গায়ে কাঁটা থাকে। পত্রমোচী। বসন্তে ফুল ফোটে। মঞ্জুরিতে অনেকগুলি ফুল থাকে। ফুল শিমুল ফুলের মতো, ১০সেন্টিমিটার লম্বা, গাঢ় লাল। বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মে। ডাল কেটে লাগালেও বাঁচে।”
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এমএ আওয়াল বলেন,মান্দার গাছ প্রধানত দুই ধরনের। কাঁটা মান্দার আর পাইন্যা মান্দার। তবে বেশ কয়েক প্রজাতির মান্দার ছিল আমাদের দেশে। উত্তরাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশসমূহ, ভারতীয় উপমহাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা থেকে শুরু করে ফিজির পূর্বাংশে মান্দার গাছের দেখা মেলে।