দৌলতপুর হাসপাতালের নার্সের বিরুদ্ধে রোগীদের কাছে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ

মো. শাহ আলম, দৌলতপুর ( মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত নার্সিং সুপারভাইজার স্বপ্না সিকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, ডেলিভারি রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, সিট কেটে দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে তিনি হাসপাতালে না করে অর্থের লোভে বাহিরে ডেলিভারি করতে বেশি ব্যস্ত থাকেন।
গত ১২ আগস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিএইচ ও ডা. শাহ আলম সিদ্দিকীর কাছে অভিযোগ করেছেন মিনতি বেগম ও তোফাজ্জল হোসেন। এসময় রোগীর স্বজনরা জানান, উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স স্বপ্না শিকদার দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর যাবত একই কর্মস্থলে কর্মরত রয়েছেন। প্রথমে কিছু দিন ভালো গেলেও গত ১৫ বছর যাবত হাসপাতালে তিনি রোগীদের জিম্মি করে একের পর এক মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। ডেলিভারি রোগীদের কাছ থেকে ৫-৬ হাজার টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তার নামে রয়েছে।
একটা রোগীও টাকা ছেড়ে যেতে পারেন না।এভাবে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্বপ্না। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে নিজেদের আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী মিনুতি বেগম বলেন, আমার মেয়ে সাথী আক্তারের বাড়ীতেই ডেলিভারি করানো হয়। কিন্তু সঠিক সময় ফুল না পড়ায় দৌলতপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স স্বপ্না আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। অনেক মিনতি করলেও কম নেননি। আমি গরিব মানুষ। তবু কথা শোনেননি। বরং আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন।আমি এর সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করছি।
অভিযোগকারী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী শাহনাজ আখতার সাথীকে নিয়ে ডেলিভারি করানোর জন্য দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। কর্তব্যরত নার্স স্বপ্না আমার স্ত্রীকে দেখে বলেন, ডেলিভারি করাতে ৭ হাজার টাকা লাগবে। আমি বলি, সরকারি হাসপাতালে এত টাকা লাগবে কেন? জবাবে উনি বলেন, মানিকগঞ্জ গেলে ২০ হাজার টাকা লাগবে। পরবর্তীতে তিনি আমার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। প্রথমে ৩ হাজার টাকা দেই। আর ডেলিভারি করানোর পর ২ হাজার টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমার ও স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পরে ২০০০ টাকা পরিশোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে আমার রোগীকে সিট কেটে বাড়িতে যেতে বলেন। এদিকে আমার ওয়াইফ ও বাচ্চা আরো অসুস্থ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমি মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওখানে গিয়ে সাত দিন থাকার পর চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ করে বাড়িতে নিয়ে আসি। সরকারি হাসপাতালে দুর্ব্যবহার মেনে নেয়া যায় না।আমি এর সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।
সরেজমিনে জানা যায়, এই চক্রের সঙ্গে নার্স আফরোজা বানু, রেহেনা আক্তার ও রোকসানা আক্তারের যোগসাজশ রয়েছে। নার্স স্বপ্না এভাবে রোগীদের চাপ সৃষ্টি করে অবৈধ উপার্জন করে দৌলতপুর গ্রামে প্রায় ৫০ লাখ টাকার জমি কিনে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ভিআইপি দ্বিতীয়তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন।সেই বিল্ডিং ভাড়া দিয়ে তিনি সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। এত টাকার উৎস্য কোথায় জানতে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের নার্সিং সুপার ভাইজার স্বপ্নার সঙ্গে কথা বললে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প:প: কর্মকর্তা ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি গত ১২ আগস্ট লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগের কারণে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তদন্তকাজ শেষ করতে পারেননি। আরো কিছু দিন লাগবে বলেছেন তারা। তদন্ত কমিটির সভাপতি গাইনী কনসালট্যান্ট ডা. নিলুফার ইয়াসমিন, সদস্য সচিব আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফেরদৌস মাহমুদ ও সদস্য মেডিকেল অফিসার ডা. মৌসুমী ভৌমিক। তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।