×

সারাদেশ

মধ্যনগর ছাড়লেন বিতর্কিত ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা, জনমনে স্বস্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ পিএম

মধ্যনগর ছাড়লেন বিতর্কিত ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা, জনমনে স্বস্তি

মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা। ছবি: ভোরের কাগজ

   

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সমালোচিত সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা অবশেষে মধ্যনগর ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি নতুন কর্মস্থল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় যান। এর আগে সোমবার সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকীর সই করা প্রজ্ঞাপনে তাঁকে বদলি করা হয়। 

সদ্য বিদায়ী ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা গত বছরের ১৪ নভেম্বর মধ্যনগরের দ্বিতীয় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পর থেকেই ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এসব নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ইউএনও অতীশ চাকমা তাঁর অস্থায়ী কার্যালয়কে সাধারণ জনগণের কাছে ভয়ংকর ও ভীতির জায়গায় পরিণত করেছিলেন। 

মধ্যনগর থাকাকালে ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে মধ্যনগর উপজেলার ২৬টি ভোটকেন্দ্রে ৫১২ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের যাতায়াত ভাতা বাবদ ১০ লাখ টাকা ভাউচারে অগ্রিম স্বাক্ষর নিয়ে আত্মসাতের চেষ্টা করেন। ১০ জানুয়ারি বিক্ষুব্ধরা মধ্যনগর বাজারে মানববন্ধনের ডাক দেন। পরে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ভুক্তভোগীদের যাতায়াত ভাতা ফেরত দিতে বাধ্য হন ইউএনও।

মধ্যনগর বাজারের ধান আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা মধ্যনগরে যোগাদানের কিছুদিন পরেই তাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আড়তে নৌকা থেকে ধানের বস্তা নামলেই তাঁকে বস্তাপ্রতি দুই টাকা দিতে হবে। এই টাকা না দিলে নদীর পাড়ে ধান নামতে দেবেন না তিনি।এই টাকা তাঁকে না দিলে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখান। এসময় বেশ কয়েকটি ধানের ব্যাপারীর নৌকাকে অযৌক্তিক ভাবে মোটা অংকের জরিমানাও করেন।

তাঁর এসব দূর্নীতি,  চাঁদাবাজি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা মধ্যনগর বাজারে একাধিকবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চাইলে নানা কৌশলে কখনো স্থানীয় এমপি আবার কখনো সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে এসব কর্মসূচি বন্ধ করেছেন।  

গত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের খরচ বহনের জন্য উপজেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় ঠিকাদার, জলমহালের ইজারাদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ হকারদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেন ইউএনও। চাঁদা দিতে না চাইলে দেখানো হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়। ওই অনুষ্ঠানে ইউএনওর সমন্বয়হীনতার কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে যাননি। 

মধ্যনগরে নির্মাণাধীন সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরির জন্য এক্সক্যাভেটর দিয়ে উবদাখালী নদীর পাড় থেকে বেআইনি ভাবে মাটি কেটে নেয় সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এ কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছিলেন মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা।এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বন্ধ হয় নদীর পাড় কাটা। বেপরোয়া মাটি কাটার কারনে নদীটি এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

উপজেলার অনেক ডোবা খালে একসময় উন্মুক্তভাবে মাছ ধরতেন স্থানীয় জেলে কৃষকরা। ইউএনও অতীশ মধ্যনগর যোগদানের পর অফিসিয়েলি- আবার কোথাও কোথাও নন অফিসিয়েলি(মৌখিক) ইজারা দিয়ে কামিয়েছেন টাকা। 

গেলো ১৮ মার্চ দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের সাতুর পীর আলী মৌলার মাজারে ওরসে বাধা দেন ইউএনও। পরে ইউএনও অফিসে ২৫ হাজার টাকা দেবার পর যথারীতি ওরস করতে আর কোন বাধা দেওয়া হয়নি বলে জানান সাতুর গ্রামের পীর আলী মৌলার মাজার কমিটির সভাপতি শামছুনূর মিয়া।

মধ্যনগরের কথিত কিছু সাংবাদিক তাহিরপুর চারাগাঁও এলাকা থেকে কয়লা বোঝাই মিনিবডি নৌকা ম্যধনগর বাজার সংলগ্ন সোমেশ্বরী নদীতে আসা মাত্রই তা থামিয়ে নৌকার লোকজনদের কাছে নিজেদের ইউএনওর নিয়োজিত প্রশাসনের লোক পরিচয় দেয় এবং কাগজপত্র  লাইসেন্স  দেখার  পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখিয়ে  প্রতিটি নৌকা  থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে বলে স্থানীয় অনেকের অভিযোগ আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চোরাকারবারি জানান, মধ্যনগর সীমান্তে অবৈধভাবে আনা ভারতীয় গরু মহিষের চোরাচালান থেকে নিয়মিত উৎকোচ নিতেন ইউএনও অতীশ। চাহিদা মতো উৎকোচ না পেলে গভীর রাতেও ভারতীয় গরু মহিষের চালান আটক করতেন।পরে টাকা পেয়ে আটক গরু মহিষ ছেড়েও দিতেন।

ইউএনও অতীশ বেশ কয়েকবার নিয়মবহির্ভূতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে হামলার শিকারও হন তিনি। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গিয়ে নগদ উৎকোচ পেয়ে অভিযান না করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

মধ্যনগর উপজেলায় হাওরে ফসল রক্ষার বাঁধ মেরামত প্রকল্পের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ৩২টি পিআইসি গঠনে অর্থ লেনদেন, সরকারি বরাদ্দ ছাড়ে উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

স্থানীয় একজন গণমাধ্যম কর্মীর মতে,‘মধ্যনগরে যোগদানের পরথেকে ব্রিটিশ শাসনামলের মত নয়া উপজেলার এই প্রশাসন চালিয়ে গেছেন ইউএনও  অতীশ। স্থানীয় সুশীল সমাজের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদায়ী ইউএনওর কর্মকাণ্ডে স্থানীয় সবাই অতিষ্ঠ ছিল। আর যেন এমন দুর্নীতিবাজ ইউএনও এখানে পদায়ন করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App