জামালপুর
নানা অপকর্ম করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে বোমা জামান

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম

মো. সুরুজ্জামান।
নব্বই দশকে দলীয়, রাজনৈতিক ও এলাকাভিত্তিক মারামারিতে ককটেল সাপ্লাই দিতেন জামালপুর শহরতলির বন্দেরবাড়ি এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো. সুরুজ্জামান। সেখান থেকে তার নাম হয় বোমা জামান। ধীরে ধীরে তার আধিপত্য, জমি দখল, নিম্নমানের ঠিকাদারি কাজ, দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রেস ক্লাবে গ্রুপিং তৈরির মাস্টারমাইন্ডসহ নানা কারণে তার নাম হয়ে যায় জামান বস। সবশেষ গত ৩ আগস্ট তিনি বোমা বানিয়েছেন। শহরের নতুন হাই স্কুল মোড়ে এই বোমা নিক্ষেপও করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে।
জানা যায়, মো. সুরুজ্জামান ওরফে বোমা জামান লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। বোমা তৈরিতে বেশ পারদর্শীও ছিলেন এই বোমা জামান। ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের আমলেও বোমা জামান ছিলেন বিএনপির আতঙ্ক। ১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পান তিনি। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জামান। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল একবার। এমনকি নিজ দলের বিরুদ্ধে লেখালেখিতেও নিজের ফেসবুক পেজে সবর থেকেছেন। এজন্য দলের কাছে বিতর্কিত হয়ে পড়েন জামান।
আরো জানা যায়, নিজের সব অপকর্ম ঢাকতে স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতার পরামর্শে কৌশলে নামসর্বস্ব একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত না হলেও নিবন্ধন ধরে রাখতে মাঝে মাঝে দু-একটি সংখ্যা বের করেন জামান। কতিপয় সাংবাদিক নেতার সহযোগিতায় গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে একটি প্রেস ক্লাবের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির। তারা নানা ষড়যন্ত্র ও প্রেস ক্লাবকে দলীয় কাজে ব্যবহার করায় সেখান থেকে চলে আসেন মূল ধারার সংবাদকর্মীরা। আর ওই প্রেস ক্লাবে বসেই নিজ দলের বিরুদ্ধে করেছেন সব ষড়যন্ত্র। জামানের পরামর্শে ক্লাব থেকে বহিষ্কার হতে হয় জেলার প্রথম সারির বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে। এরপর ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। সাংবাদিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিজেকে জানান দেন দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে। এই কারণে অনেক সুবিধাও পান তিনি।
জামালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তারিক মালেক সিজার বলেন, জামান একটি নোংরা লোক। ৯০ দশকে শহরের কোনো মারামারিতে বোমা বা ককটেলের প্রয়োজন হলে তাকে ডাকা হতো। তিনি সব সময় ককটেল সাপ্লাই দিতেন। এভাবেই তার নাম হয়ে উঠে বোমা জামান। তার কুকর্ম আর কুবুদ্ধি দিয়ে সেসময় অনেক নেতাকে পেছনে ফেলে শহরের জামান বস হয়ে উঠে। তিনি মূলত আওয়ামী লীগের কলঙ্ক।
প্রেস ক্লাব জামালপুরের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জামানের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি আমরা প্রথম সারির একদল সাংবাদিক। কারণ জামান প্রেস ক্লাবকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন রাজনৈতিক ফায়দাসহ বিভিন্ন অপকর্ম যেন ঠান্ডা মাথায় করতে পারেন। এ কারণে একদল সর্বদলীয় চামচা সাংবাদিককে পুঁজি করে দাপটের সঙ্গে জামালপুরে নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন জামান, যা খুবই বড় দুঃখজনক।
বিএনপি নেতা হারুণ বলেন, আমরা একটি জমি কিনেছিলাম। জামান ক্ষমতার বলে সেই জমি দখল করে রেখেছে।
জামানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাঙ্গীর নামে একব্যক্তি বলেন, আমি জামানের কাছ থেকে শহরের মালগুদাম রোডে একটি জমি কিনেছিলাম। তিনি প্রতারণা করে আমাদের কাছে জমিটি বিক্রি করে। আমি কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছিলাম। জামানের প্রতারনার কারণে সেই জমি ও বাড়ি হারিয়ে এখন আমি নি:স্ব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মীর ইখলাস বলেন, জামালপুরের ইতিহাসে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করা খুবই ঘৃণিত একটি কাজ। আওয়ামী লীগের পক্ষে যে এই কাজটি করেছে, তারা দেশের শত্রু। আমরা সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এসব বিষয়ে মো. সুরুজ্জামান ওরফে বোমা জামানের বক্তব্য জানতে চেয়ে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল দেয়া হলে ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।