সুইস ব্যাংকের ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নেয়া হচ্ছে এনআইডি কার্ড ও টাকা

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম

এরই মধ্যে বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে। ছবি: ভোরের কাগজ
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে সুইস ব্যাংকে জমানো কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে বিনা সুদে ঋণ বিতরণ করা হবে বলে প্রলোভন দেখাচ্ছে 'অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল জাতীয় সংস্থা' নামের একটি কথিত এনজিও।
তবে ঋণ পেতে হলে সার্বিক তথ্যের একটি ফরম পূরণের পাশাপাশি জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। কারো কারো কাছে চাওয়া হচ্ছে টাকাও। উপজেলার চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এমন অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সংস্থাটি। এরইমধ্যে বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত ও স্মার্ট যুবক, তরুণ ও শিক্ষার্থী এবং চালাক চতুর নারীদের উপজেলা ভিত্তিক সংগঠক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, বাংলাদেশের যেসব কালো টাকা সুইস ব্যাংকে জমা পড়ে আছে, সেগুলো কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ধার করা হবে। পরে তা গরীব-অসহায় কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনা সুদে বিতরণ করবেন তারা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে জনপ্রতি দেয়া হবে এক লাখ টাকা। আর যারা মোটামুটি স্বাবলম্বী কিংবা ব্যবসায়ী তাদের দেয়া হবে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ। আর ঋণ পেতে কোনো জামানতের প্রয়োজন হবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংস্থাটি পূর্ব নাম ছিল 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ'। বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল জাতীয় সংস্থা। বাংলাদেশ সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বিহীন এ সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের প্রতারণা জাল বিস্তার করে চলেছে।
সংস্থাটির মাঠ পর্যায়ে কর্মরত এক সংগঠক জানান, ২০ জন সদস্য একজন সংগঠকের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে জমা দিলেই সুদ ছাড়াই মিলবে এক লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ। পরে কিস্তিতে আসল টাকা পরিশোধ করলেই হবে। সুদবিহীন ঋণের কথা শুনে গ্রামের সহজ-সরল লোকজন ফরম পূরণ করে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সংগঠককে খুশি করতে কেউ কেউ দিচ্ছে টাকাও। বছর দুয়েক আগে উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতুর নতুন বাজারের পল্লী চিকিৎসক রানা মাহমুদ ও মধ্যনগর বাজারের আরেক পল্লী চিকিৎসক সুজিত রায়ের মাধ্যমে এই কার্যক্রম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পরিচালিত হয়েছিল। তখন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়।
সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী কলমাকান্দা উপজেলার এ প্রতারক চক্রের সদস্য রহিমা আক্তার ও লাভলু মন্ডল নামে দুজন ব্যক্তি কমবয়সী স্মার্ট স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে কয়েকটি চক্র গঠন করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আবার নতুন করে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন।
এ চক্রের সদস্য উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশিন্তপুর গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল-বায়জিদ বলেন, পার্শ্ববর্তী কলমাকান্দা উপজেলা থেকে রহিমা আক্তার তাদেরকে কয়েকটি চক্রকে সাধারণ মানুষের তথ্য সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের পদবী সংগঠক। এ জন্য তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে ঋণ দেয়ার কথা বলে তাদের নাম, স্বাক্ষর, এনআইডিসহ নানা তথ্য নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে চক্রের মূল হোতা রহিমা আক্তার ও লাভলু মন্ডল জানান, এর পূর্বেও এই সংগঠনের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। সংগঠনের কার্যক্রম বুঝিয়ে বলার পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মূলত সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া কালো টাকা উদ্ধার করে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ঋণ দেয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হচ্ছে। গত দুবছরে সংস্থাটি ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করেছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ ইফতেখার আলম চৌধুরী বলেন, 'এনআইডি কার্ডের তথ্য ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সম্পদ। ওই এনআইডি কার্ডের তথ্য প্রতারক চক্রের হাতে চলে গেলে ব্যক্তির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এনআইডি কার্ডের তথ্য কারো কাছে দেয়া ঠিক নয়।'
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সজীব রহমান বলেন, 'এই বিষয়টি আমি শুনেছি। দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'