দানবাক্সের টাকার পরিমাণ জানাতে নারাজ পাগলা মসজিদ কমিটি

হারিছ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
‘২০২৪ সালের বিপ্লবের পর আমরা ছাত্র-জনতা সবকিছুর মধ্যেই অংশগ্রহণ করি এবং খোঁজ-খবর নিই, এখানে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে কিনা। এরই ধারাবাহিকতায় বিপ্লবের পর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না।
কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশের মানুষ জানতে চাচ্ছিল বছরের পর বছর পাগলা মসজিদের দানবাক্সে কোটি কোটি টাকা আসছে। এই টাকা কোথায় রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাগলা মসজিদের কত কোটি টাকা রয়েছে। এই টাকা কোথায় ব্যয় হচ্ছে। দেশের মানুষ এবং কিশোরগঞ্জের আপামোর ছাত্র-জনতা প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয়, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের প্রশাসন যারা পাগলা মসজিদের দায়িত্বে রয়েছে তারা এটা ক্লিয়ার করেনি। কত টাকা আসছে, সোনা-রুপা কী আসছে, বৈদেশিক মুদ্রা কী আসছে, ওই টাকা কোথায় রাখা হচ্ছে। কাদের মাধ্যমে রাখা হচ্ছে, কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে। পাগলা মসজিদ নিয়ে এই যে মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গা, এটা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে।’
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাগলা মসজিদের টাকা গণনার সময় এসব অভিযোগ তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন।
অভিযোগ করে ইকরাম হোসেন আরো বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি, অতীতে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, তারা বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে পাগলা মসজিদের টাকা সরিয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যারা পাগলা মসজিদের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা যদি অনতিবিলম্বে দেশবাসীর কাছে পাগলা মসজিদের অর্থের বিষয়টি স্পষ্ট না করেন, তাহলে কিশোরগঞ্জের ছাত্র-জনতাসহ এ দেশের মানুষ এই হিসাব নেবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, আমরা গত তারিখে জানতে চেয়েছিলাম পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে? এই টাকা কোথায় রক্ষিত রয়েছে? এই টাকা কোথায় কোথায় ব্যয় করা হয়? ওনারা বলেছিলেন এগুলো স্পষ্ট করবে। কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি ও জনসমক্ষে কোনো কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।
সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন আরো বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বিপ্লবের পরে যখন টাকা গণনা করা হয়েছিল, ধরা পড়েছিল যে এখান থেকে টাকা চুরি করা হয়েছে গণনার সময়। পরে তারা এটাকে লামছাম দিয়ে সমাধান করেছে।
তিনি আরো বলেন, কথা ছিল টাকা গণনার সময় সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন কিশোরগঞ্জকে যারা রিপ্রেজেন্ট করে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তাদের নিয়েই এই দানের টাকা গণনার কার্যক্রমটি হবে। আজ যখন দানবাক্স খোলা হয় আমাদের ছাত্র-জনতাসহ কোনো সংগঠনকেই তারা জানায়নি। যারা প্রশাসনে রয়েছে, তাদের আচরণ অনেকটাই লুকোচুরির মতো। যারা এই মসজিদের দায়িত্বে রয়েছে, তারা কীভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তারা ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের স্পষ্ট কথা যদি প্রশাসন থেকে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না দেয়া হয়, হিসাব প্রকাশ না করা হয়, তাহলে কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এর হিসাব নিশ্চিত করব।
এর আগে তিন মাস ১৪ দিন পর শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টায় পাগল মসজিদের ১০টি দানবাক্স ও একটি ট্রাঙ্ক খোলা হয়েছে। এতে পাওয়া গেছে রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা।
টাকা গণনাকালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খানকে সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন করেন, পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে সর্বমোট কত টাকা রয়েছে? কিন্তু তিনি এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যান।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়াকেও প্রশ্ন করা হয় পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে সর্বমোট কত টাকা রয়েছে? তিনিও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।
তিনি জানান, এটা আমি বলতে পারবো না। মাননীয় জেলা প্রশাসক এটার সভাপতি। ওনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদের জানতে দেন না। অ্যাকাউন্টটি স্যার নিজে মেনটেইন করেন।
ওয়াকফ এস্টেট কিশোরগঞ্জের ওয়াক্ফ হিসাব নিরীক্ষক মো. আলাউদ্দিনকেও একই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে মোট কত টাকা রয়েছে এ বিষয়টি আমি এখন আপনাদের বলবো না। জেলা প্রশাসক মহোদয় কিছুক্ষণ আগে এই প্রশ্নের উত্তর দেননি, আমিও দেবো না। এটা সরকারের সিকিউরিটির ব্যাপার। গত অর্থবছর পাগলা মসজিদ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামের কাছেও জানতে চাওয়া হয় পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে মোট কত টাকা রয়েছে। তিনি জানান, ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমি তা বলতে বাধ্য নই। অ্যাকাউন্টের মূল হিসাব একমাত্র অ্যাকাউন্টের মালিকের জানার অধিকার রয়েছে।