×

সারাদেশ

মধ্যনগর সীমান্তে আবারো বেড়েছে চোরাকারবার

Icon

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ)

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পিএম

মধ্যনগর সীমান্তে আবারো বেড়েছে চোরাকারবার

নৌ পথে পাচার করা হচ্ছে চোরাইপথে আসা ভারতীয় গরু। ছবি: ভোরের কাগজ

   

সেপ্টেম্বর শুরুতে কিছুদিন সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্তের চোরাকারবার বন্ধ ছিল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হিসেবে যোগদান করেন সজীব রহমান। ওসি সজীবের আগমনে সীমান্তের নির্জীব চোরাকারবার আবারো সজীব হয়ে ওঠে। এবার আগের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে উঠে চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা। এমনটি দাবি করছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সচেতন মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্যনগর সীমান্ত এখন চোরাচালান ও মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতি রাতে চোরাকারবারিরা সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু, মহিষ, চিনি, কম্বল,  বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, কসমেটিকস, শাড়ি কাপড়, কাঁচা সুপারি, চা পাতা, আমল গুঁড়ো দুধসহ বিভিন্ন পণ্য দেদারসে আমদানি করছে। অন্যদিকে এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শুকনো ও ভেজা সুপারি, মাছ, মুরগী ইত্যাদি পণ্য ভারতে পাচার হচ্ছে। 

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের আন্তরপুর গ্রাম, মহেষখলা, কাইটাকোনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর ও কান্দাপাড়া, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া গ্রামে রয়েছে চোরাকারবারিদের সংঘবদ্ধ চক্র। 

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মহেষখলা, কাইটাকোনা, কড়ইবাড়ী, আমতলা, ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটা সীমান্ত এলাকার ছয়টি স্পট দিয়ে প্রতিরাতে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় গরু, মাদক সহ বিভিন্ন পণ্য ঢুকছে বাংলাদেশে আর বাংলাদেশি পণ্য পাচার হচ্ছে ভারতে। 

উপজেলার দাতিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো.সজীব মিয়া বলেন, প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকার গরু ও মহিষ চোরাই পথে ভারত থেকে আসছে। এসব গরু ও মহিষ রাতে এমনকি দিনের বেলায় প্রকাশ্যে পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে উপজেলার মহিষখলা হতে সড়ক ও নৌপথে চোরাচালানের হাজার হাজার গরু, মহিষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। সুপারিসহ বিভিন্ন দ্রব্য ভারতে পাচারের জন্য শত শত সেলু ইঞ্জিনচালিত ট্রলি দিবারাত্রি সড়কে চলাচল করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চোরাকারবারী জানান, বিজিবিকে নিয়মিত একটা মাসোহারা দিতে হয়। 

তবে মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজীব রহমানের নিয়োজিত ল্যাইনম্যানকে  (বখরা আদায়কারী) প্রতিটি ভারতীয় গরুর জন্য ৪০০ টাকা ও মহিষ প্রতি ৭০০ টাকা এবং চোরাইপথে আনা চিনির বস্তা প্রতি ১০০ টাকা দিতে হয়। আর ভারতে পাচার করতে সুপারির বস্তা প্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হয়। টাকা না দিলে আমাদের মালামাল আটক করে পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। তিনি আরো জানান, থানার লাইনম্যান প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার পুলিশের নামে বখরা আদায়ের টাকা উত্তোলন করে প্রতি বুধবার থানার এএসআই মাহিনুর ও কনস্টেবল তাওহীদুল ইসলাম মাধ্যমে ওসি সজীব রহমানকে দিয়ে আসেন। 

এদিকে মধ্যনগর সীমান্তে চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ। অবৈধ এ ব্যবসা দেশের অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান তারা। 

মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সঞ্জীব রঞ্জন তালুকদার টিটু বলেন, পুলিশ ও বিজিবি'র সহযোগীতা না থাকলে সীমান্তের চোরাকারবার চলতে পারে না। এছাড়া মধ্যনগর সীমান্তে চোরাইপথে আনা ভারতীয় গরু, মহিষের বাংলাদেশি লাইসেন্স হলো মহিষখলা বাজারের পশুর হাটের 'হাসিল রশিদ'। মহিষখলা বাজারের ইজারাদার এই 'হাসিল রশিদ' না দিলে মধ্যনগর সীমান্তে ভারতীয় গরু মহিষের চোরাকারবার বন্ধ হয়ে যাবে। তাই চোরাকারবারি,মহিষখলা বাজারের ইজারাদার, পুলিশ ও বিজিবি এই চার পক্ষের সমন্বয়ের মাধ্যমেই মধ্যনগর সীমান্তে চলছে চোরাকারবারের রমরমা বাণিজ্য।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, থানার ওসি সাহেব চোরাকারবারিদের থেকে নিয়মিত আর্থিক সুবিধা পান বলে শুনেছি। বিজিবিও টাকা পায়। বাস্তব কথা বলতে গেলে এখানে বিজিবি ও পুলিশের পাহারায় চোরাকারবারিরা প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।' এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

সীমান্তের চোরাকারবার প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ওসি মো, সজীব রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে 'এ বিষয়ে আপনার সাথে পরে কথা বলব' বলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন খান সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে ভোরের কাগজকে বলেন, 'মধ্যনগর সীমান্তে কিছুদিন চোরাচালান প্রায় বন্ধ  হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে শুনেছি। মধ্যনগর তো আসলে এত বিচ্ছিন্ন এলাকা যে চাইলেই সব সময় মনিটরিং করা খুবই কঠিন। তবে মধ্যনগরের চোরাকারবার কেন বেড়েছে এবং এর সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত তা আমি তদন্ত করে দেখবো। তিনি আরো বলেন, চোরাচালানের সঙ্গে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App