ভূমিদস্যু-চাঁদাবাজদের খপ্পর থেকে বাঁচতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে প্রবাসীর অভিযোগ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের ভালুকায় সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজ চক্রের খপ্পর থেকে রক্ষা পেতে চান এক প্রবাসী শিল্পপতি ব্যবসায়ী। নাজমুল ইসলাম নামের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এ বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বরাবর অভিযোগও করেছেন। অভিযোগে সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের আমতলী এলাকায় শিল্প কারখানা গড়ার জন্য কয়েক দাগ মোট ৩৫ বিঘা নিষ্কন্টক ও দেয়াল দিয়ে ঘেরা জমি কেনেন তিনি। জমি কেনার পর নিয়মানুযায়ী নামজারী ও খাজনা পরিশোধ করার পাশাপাশি কেয়ারটেকার নিয়োগ দিয়ে জমি দেখাশোনা করিয়ে আসছিলেন প্রবাসী ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম।
তবে হঠাৎ স্থানীয় বনবিভাগ ওই জমির ১৫৪ নং দাগে তাদের দাবি রয়েছে জানালে, ২০০৬ সালে ভুক্তভোগী নাজমুল ইসলাম ভালুকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে এ বিষয়ে মামলা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড নিজেদের সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ ও স্কেচম্যাপ তৈরি করে ওই জমি বনের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তা বনবিজ্ঞপ্তিত ভূমি থেকে অবমুক্ত করতে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ফরেস্ট সেটলমেন্ট অফিসার বরাবরে পাঠান। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ফরেস্ট সেটলমেন্ট অফিসার নিজে স্বরজমিনে তদন্ত করেন। রায়ে তিনি জমি বনের দাবি থেকে অবমুক্তি করেন ও ২০ ধারায় চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত বন ঘোষণার বহির্ভূত রাখার জন্য আদেশও দেন।
তবে এরপরও বনবিভাগ ২০০৭ সালে পুনরায় ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার আদালতে আপিল করে। উক্ত ব্যবসায়ীর জমির সব কাগজ পর্যালোচনা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ফরেস্ট সেটলমেন্ট অফিসারের রায়ের কপি, ও এসিল্যান্ড কার্যালয়ের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার আদালত ওই জমি বনের বিজ্ঞপ্তি বহির্ভূত রাখার আদেশ বহাল রাখেন ও বনের পক্ষ থেকে করা আপিল আবেদন খারিজ করে দেন।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, এর দীর্ঘদিন পর ২০১৭ সালে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে না পেয়ে আদালতের সকল রায় ও আদেশ অগ্রাহ্য অমান্য করে জমির প্রকৃত মালিককে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে স্থানীয় বন বিট কর্মকর্তা। পরে বাধ্য হয়ে তিনি ২০১৮ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। শুনানির পর হাইকোর্ট “যতদিন পর্যন্ত এই জমি সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি না হবে ততদিন পর্যন্ত” ওই জমিতে নাজমুল ইসলামের পক্ষে স্ট্যাটাস কো ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
পরবর্তীতে দীর্ঘদিন কোন ঝামেলা ছাড়াই নিজ জমি কেয়ারটেকার দিয়ে দেখভাল ও ভোগদখল করে আসছিলেন তিনি। তবে নাজমুল ইসলাম স্বপরিবারে বিদেশ চলে গেছেন বলে ২০২২ সালে জানাজানি হবার পর স্থানীয় ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজ চক্রের হোতা আবু জাফর সরকার ও বিগত সরকারের মদদ পুষ্ট সন্ত্রাসী গংদের সাথে নিয়ে জবরদখলের উদ্দেশ্যে আবির্ভূত হয় বন বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম। ২০২৩ সালে সাজানো হয় বনের জমি উদ্ধারের নাটক। ভুক্তভোগী ওই শিল্পপতি দেশের বাইরে থাকার সুযোগে হাইকোর্টের ২০১৮ সালের নির্দেশ অবমাননা করে গত ৫ আগস্ট ২০২৩ তারিখে দিনব্যাপী হবিরবাড়ী বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম খানের নেতৃত্বে ওই জমি উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে সেখানে অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, অন্তত ৬ বার ওই জমির কেয়ারটেকারদের মারধর করে রক্তাক্ত করে তারা, এমনকি গভীররাতে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করে ওই চক্র। অভিযোগে বলা হয়, বনের কাঁধে ভর করে ওই জমি জবরদখলের জন্য বন বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম ও ভুমিদস্যুদের মাঝে অন্তত ৫ কোটি টাকার চুক্তি হয়। তার পর থেকেই আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ওই জমি দখল করতে বেপরোয়া হয়ে উঠে ওই সম্মিলিত দস্যুচক্র। এ বিষয়ে বিগত সরকারের আমলে ভালুকা মডেল থানায় অন্তত ৬ বার অভিযোগ করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রভাব ও ওই চক্রের বাধায় আইনগত কোন সহযোগিতা পাননি ওই শিল্পপতি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের পতনের পর নতুন করে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশের কাঁধে ভর করে ওই জমি জবরদখলের জন্য বন বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম ও স্থানীয় ভূমিদস্যু গং নতুন করে নাটক শুরু করেন। কোন কারন ছাড়াই ওই জমির ময়লা সরানোর কাজ তদারকীর জন্য শিল্পপতির নিয়োগ করা কেয়ারটেকারসহ ৩ জনকে ১৮ নভেম্বর অপহরণ করে আশরাফুল গং। ৩ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে ও প্রশাসনের চাপের মুখে তাদের ফেরত দিতে বাধ্য হয় । পরে ওই শিল্পপতি সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার কাছে বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ করেন।