বাংলাদেশি দুটি মাছ ধরার জাহাজ আটক করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। বর্তমানে জাহাজ দুটি ভারতের পূর্ব উপকূলের উড়িশ্যা রাজ্যের জগৎসিংহপুর জেলার পারাদ্বীপে উপকূলে রাখা হয়েছে।

জাহাজ দুটিতে ছিল ৭৮ নাবিক। তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভারতীয় কোস্ট গার্ডের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাহাজ দুটি ভারতের জলসীমায় গিয়ে মাছ ধরছিল। এ কারণে বিশেষ অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে জাহাজ দুটি।

এদিকে জেলে ও নাবিকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাদের স্বজনরা ভিড় করছেন চট্টগ্রামে জাহাজ মালিকদের অফিসে। দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে তাদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের নিয়ে যাওয়া জাহাজ দুটির মধ্যে একটি এফ ভি লায়লা-২। এই ফিশিং জাহাজটির অপারেশন কোম্পানির নাম ‘এস আর ফিশিং’। অপর ফিশিং জাহাজ এফভি মেঘনা-৫ এর অপারেশন কোম্পানির নাম সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড। এফভি লায়লা-২ জাহাজাটিতে নাবিকসহ ৪২ জন এবং এফভি মেঘনা-৫ এ ৩৭ জন জেলে ছিলেন।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল ওয়াহেদ জানান, এফভি মেঘনা-৫ ফিশিং জাহাজে গত ২৪ নভেম্বর মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ফিরে আসার কথা ছিল। এরই মধ্যে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১১টা কিংবা ১২টার দিকে জাহাজটিকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। কী কারণে তাদের ধরে নিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, খুলনা অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ভারতীয় কোস্টগার্ড ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় এফভি লায়লা-২ নামে আরো একটি মাছ ধরার জাহাজ নিয়ে গেছে। জাহাজ দুটি ভারতের ওড়িশার প্যারাদ্বীপ নামক এলাকায় নোঙর করেছে বলে জানতে পেরেছি।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে ভারতের পক্ষ থেকেও। ভারতীয় কোস্ট গার্ডের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে জাহাজ দুটির ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ার জন্য জাহাজ দুটিকে পারাদ্বীপে নেয়া হয়েছে।

ভারতীয় সংস্থাটির দাবি, বাংলাদেশি জাহাজ দুটি ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করে অননুমোদিতভাবে মাছ ধরছিল।

ভারতীয় কোস্ট গার্ডের নিয়ে যাওয়া আরেক জাহাজ এফ ভি লায়লা-২ এস আর শিপিং-এর মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটির সিএফও মিন্টু সাহা বলেন, লায়লা-২ জাহাজটি গত ২৭ নভেম্বর জাহাজটি মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। ২০ ডিসেম্বর সাগর থেকে মাছ ধরা শেষে ফিরে আসার কথা ছিল। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শুনলাম আমাদের জাহাজ ভারতীয় কোস্ট গার্ড ধরে নিয়ে গেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করে আসছি। এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি।

তিনি বলেন, খুলনা অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে যে স্থানে মাছ ধরা হচ্ছিল, সেখান থেকে প্রায় সময় মাছ ধরা হয়। কেন তাদের ধরে নিয়ে গেছে. তা বুঝতে পারছি না। এদিকে, নাবিক-জেলেসহ ভারতীয় কোস্ট গার্ড জাহাজ ধরে নিয়ে গেছে এমন খবরে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এফভি মেঘনা-৫ জাহাজের অফিসে ভিড় করছে স্বজনরা। তারা তাদের স্বজনদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক (সমুদ্রিক) আবদুস ছাত্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাছ ধরার জাহাজসহ নাবিক-জেলেদের নিরাপদে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।