বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছেন, অভ্যুত্থানকারী বড় একটা অংশ চাইছে না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। তারা চাইছে, সব বিচার সম্পন্ন করে নির্বাচন হবে। নানা দিক থেকে নানা প্রশ্ন আছে। ফলে আমরা শুধু আজ আর কালের কথা চিন্তা করলে হবে না। এখন থেকে ১০ থেকে ২০ কিংবা ৫০ বছর পর কী হবে, সেই কথাও মাথায় রাখতে হবে। 

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি। 

রুমিন ফারহানা বলেন, বলা হবে, ২০১৪-১৮ সালের নির্বাচনে যা হয়েছে, ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনেও তা-ই হয়েছে। ফলে এই সব বিষয় চিন্তাজগতে রেখেই নির্বাচনের পথটা আমাদের পার হতে হবে।

তিনি বলেন,  আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি মাঠে থাকে, তাহলে নির্বাচনী পরিবেশটা কেমন হবে? খুনোখুনি ও  রক্তস্রোত বয়ে যাবে বাংলাদেশ? আমি মনে করি, এই প্রশ্নগুলো সবার মনে আছে, কেউ মুখে কিছু বলছে না। সুতরাং দয়া করে প্রশ্নগুলো নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই  এই প্রশ্নগুলোর সমাধান হওয়া উচিত।

বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই বিভিন্ন মহল নানা ষড়যন্ত্রে ব্যতিব্যস্ত। তারা এক দিনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে শান্তিতে দেশ পরিচালনা করতে দিতে পক্ষপাতি নয়। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষও বিশ্বাস করে, একটি নির্বাচিত সরকার যত সহজে এ ধরনের অস্থিতিশীলতা বা সমস্যা সুরাহা করতে পারে, আর কোনো সরকারের পক্ষে সমস্যার নিরসন করা এত সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। ফলে দেশের স্বার্থে, জনগণের  স্বার্থে একটি নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব দিলে, সেটা সব মহলের জন্যই হিতকর হবে। 

রুমিন ফারহানা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের   ভাষণের মাধ্যমে আমরা প্রাক ধারণা পেয়েছি নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবশ্যই বলতে হচ্ছে, এটি একটি সু-খবর। ভালো খবর। তবে আমরা আরো বেশি খুশি হতাম, আশ্বস্ত হতাম, রোডম্যাপটি কী হতে পারে, তারা কবে নির্বাচন নিয়ে কি চিন্তা-ভাবনা করছেনি, এ বিষয়ে যদি দায়িত্বশীলরা একটু খোলসা করতেন। তিনি বলেন, সামনে এখন অনেক প্রশ্ন। প্রথমত, আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হচ্ছে? দ্বিতীয়ত, সেই নির্বাচনে কি দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারবে? এ বিষয়টিতে পরিষ্কার হতে হবে।

বিএনপির এই নেত্রী আরো বলেন, আমরা দেখেছি একটা অর্থনৈতিক স্থবিরতা। আমরা লক্ষ করছি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। কারণ, বিনিয়োগের জন্য একটা স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করবেন তখনই, যখন দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। তাই সেই দিক থেকে চিন্তা করলে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। ফলে আমরা আশা করব, এই অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের একটি রোডম্যাপ দেবে, কী কী সংস্কার তারা কত দিনের মধ্যে সম্পন্ন করে মানুষের ক্ষমতা মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেবে, এটা আমাদের আশা।

মামলা বাণিজ্যের ব্যাপারে রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা জানি, অনেক নিরীহ মানুষকে টাকা দিলে মামলা থেকে নাম বাদ যাবে, টাকা না দিলে মামলায় নাম দেয়া হবে, এ রকম ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়, সারা বাংলাদেশে ঘটেছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আপনাদের মাধ্যমে পুলিশকে অনুরোধ করব, মামলা নেয়ার আগে দয়া করে যাচাই-বাছাই করবেন।...আর যারা মামলা–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাদের আমি বলব, সাবধান হয়ে যান। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জীবন দিতে শিখেছে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু ক্ষমতার বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়াতে শিখেছে। এই শেখা জিনিস কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না। সাঁতার যে একবার শেখে, সে কিন্তু আমৃত্যু সাঁতার কাটতে পারে। সুতরাং আপনারা সাবধান হয়ে যান।