সাবেক এসপি তানভীর কারাগারে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ১২টার দিকে তাকে আদালতে নেয়া হয়। কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি। উপ-পুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, সাবেক এসপি তানভীর আরাফাত পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা রয়েছে। কিভাবে কোথায় থেকে কখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত সুজনের রাজনৈতিক বড় ভাই সুজন হোসেন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলায় মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১২ জনকে। নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে। মামলার বাদী সুজন হোসেন কুষ্টিয়া শহরের মিললাইন এলাকার লালন শাহ সড়কের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
মামলার বাদী সুজন হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আমার দলীয় ছোট ভাই বিএনপির সহযোদ্ধা সুজন মালিথা নিয়মিত বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিত। যার কারণে আসামিদের কাছে সুজন মালিথা শত্রু হিসেবে পরিণত হয়। আসামিরা আমার দলীয় ছোট ভাইকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারই জের ধরে সুজন মালিথা বিএনপির প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে নিজ বাড়িতে ঢুকলে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে আসামিরা সুজনের বাসায় ঢুকে এবং তাকে জোরপূর্বক বাসা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যায়।
পরবর্তী সময়ে আমিসহ সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন তাকে দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পারি, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সুজন মালিথাকে বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরতলীর মোল্লাতেঘরিয়া ক্যানালেরপাড়ে গুলি করে হত্যা করেছে। অতঃপর আমিসহ সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন আসামিদের কাছে উপস্থিত হয়ে সুজন মালিথাকে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে আমাদের তাড়িয়ে দেয়।
পরবর্তী সময়ে একাধিকবার উক্ত ঘটনার বিষয়ে মামলা করার চেষ্টা করলে আসামিরা আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। ঘটনার বিষয়ে এলাকার অনেকেই বিষয়টি জানেন।
মামলার আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাত, মডেল থানার সাবেক ওসি নাসির উদ্দিন, একই থানার সাবেক ওসি একেএম মিজানুর রহমান, ওই থানার সাবেক এসআই সাহেব আলী, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, দৌলতপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান টোকন চৌধুরী, কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদের সভাপতি সাইফুদ্দৌলা তরুন, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ আরিফুর হোসেন সজীব, কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ ওরফে বিচ্ছু ও জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি সোহাগ আলী। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আমি খুলনায় একটা মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়ে তিনি কিছু না বলে মোবাইল কেটে দেন। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এসএম তানভীর আরাফাত কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন।