×

সারাদেশ

মাদকের ছোবলে জর্জরিত মানিকগঞ্জ

Icon

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ থেকে

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম

মাদকের ছোবলে জর্জরিত মানিকগঞ্জ

ছবি: সংগৃহীত

   

মানিকগঞ্জ জেলার সর্বত্রই দিনদিন মাদকসেবি ও মাদক কারবারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তাদের ভয়ে স্থানীয় কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মুখ খুলে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। গোটা জেলা এখন মাদকের ছোবলে জর্জরিত। এলাকার সুশীল ব্যক্তিদের  অভিযোগ, জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই পুলিশের কার্যক্রম শিথিল হওয়ায় বর্তমানে মাদকসেবি ও মাদক কারবারীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে গেছে। এলাকার অনেক তরুণ নেশার জগতে ডুব দিয়েছেন। তারা নেশার টাকা সংগ্রহ করতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেনে। এতে সমাজে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ও বরংগাইল এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ এলাকায় মাদকসেবন ও বিক্রি চলে আসছে। আজ পর্যন্ত ছেদ পড়েনি। মাঝেমধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হলে অনেককেই আটক করা হয়। তবে আটক ব্যক্তিরা কিছুদিন না যেতেই জেল থেকে বের হয়ে আসেন এবং পূর্বের ন্যায় মাদক সেবন ও মাদক কারবারিতে যুক্ত হয়ে পড়েন। 

মহাদেবপুর, বরংগাইল, উথলী, টেপড়া আরিচা ও পাটুরিয়ার বিভিন্ন হোটেল ও রেঁস্তোরার অনেক শ্রমিক নেশাদ্রব্য গ্রহণ করেন। এরা সকালের দিকে হোটেল মালিক বা ম্যানেজারের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে হেরোইন বা ইয়াবা সেবন করেন। পরে শুরু করে তারা হোটেলে কাজ। আবার অনেক মাদকাসক্ত নেশার টাকা  জোগাড় করতে বাসে ভিক্ষা করেন। 

অন্যদিকে গ্যাস চালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও হেলপাররা গাজা ছাড়াও বিভিন্ন মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসব মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোরতর হওয়া দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও সচেতন ব্যক্তিরা। 

ঘিওর উপজেলার ধূলণ্ডী গ্রামের এক বর্ষীয়ান ব্যক্তি বলেন, তার বাড়ির পাশে বেশ কয়েকজন মাদকাসক্ত রয়েছেন। একটা সময় তাদের পরিবারের সুখ্যাতি ছিল। চাষাবাদের অনেক জমিও ছিল। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় ক্রমশ তাদের অধপতন নেমে আসে। তারা পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে দেন চাষাবাদের জমি ও বাড়ি। এখন তাদের একজন মানিকগঞ্জ শহরে ভাড়ায় অটোরিকশা চালান, দুইজন হোটেলে চাকরি করেন, অন্যজন নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ করেন। এরা অনেকবার জেলও খেটেছে। কিন্তু নেশার জগত থেকে ফিরে আসেননি। শুধু প্রশাসনের চাপে পড়ে এরা আর কতটুকু ভালো হবে। সামাজিকভাবে এদের ব্যাপারে যদি কঠোর পদক্ষেপ নেয়া যায়, তবেই হয়তো এদের মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে।

সিংগাইর উপজেলার বলধারা, জামির্ত্তা, জয়মণ্টপ, সাহরাইল ও মানিকনগর এলাকার সচেতন লোকজন জানান, এসব এলাকায় সম্প্রতি হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা, চোলাইমদ ও রেক্টিফাইড স্প্রিরিট সেবির সংখ্যা আগের চেয়ে  অনেক বেড়েছে। ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার রুপারচর এলাকার রবিউল, কোমর আলী, নূরু মিয়া ও সিংগাইর থানার নীলাম্বরপট্টি এলাকার নজরুল ইসলামসহ একটি শক্তিশালী মাদক কারবারি সিন্ডিকেট প্রায় দুই যুগ ধরে চোলাইমদ তৈরি করে সরবরাহ করে আসছে বিভিন্ন এলাকায়। পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও স্থায়ীভাবে চোলাইমদ উৎপাদন বন্ধ হয়নি। কিছুদিন বন্ধ থাকে শুধু এটুকুই।  এ ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রত্যাশা করেন প্রশাসন মাদককারবারি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হবে।  চোলাইমদ উৎপাদন চিরতরে বন্ধ হবে। 

মানিকগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আহসানুল কবির বুলবুল বলেন, গত এক বছরে মাদক বিষয়ে ২৯৭টি মামলায় ৩০৯জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পলাতক রয়েছেন ১৬জন। এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া আলামতের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা ৯০৯৯পিস, গাজা ২ কেজি ২৫গ্রাম, হেরোইন ৫৮৩ গ্রাম, চোলাইমদ ৬৭ লিটার, নেশার ইনজেকশন ১৩২ এ্যাম্পুল, মদ তৈরির কাঁচামাল (ওয়াশ) ৫০০ লিটার, শটগানের অব্যবহৃত ২টি কার্তুজ। মাদক নির্মূলের লক্ষ্যে জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে মাদকের গডফাদারদের তালিকা চাইলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ (পিপিএম) বলেন, এই চোলাইমদ তৈরি এখনো স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায়নি। তবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অল্প সংখ্যক পুলিশ নিয়ে অভিযানে গেলে, ওই  মাদককারবারি সিন্ডিকেটের সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। তাই কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে ৪শ লিটার চোলাইমদ জব্দ ও ২জনকে আটক করা হয়। র‌্যাবকে সঙ্গে নিয়ে ওখানে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ইয়াছমিন খাতুন দৈনিক ভোরের কাগজকে বলেন, মাদকসেবনকারী এবং মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  ইতোমধ্যে এবিষয়ে কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে সেই পরিকল্পনা প্রয়োগের মাধ্যমে মাদকের মূলচক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App