জাঁকজমকপূর্ণভাবে শেষ হলো চৌগাছার ‘গুড় মেলা’

জিয়াউর রহমান রিন্টু, যশোর
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৬ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
যশোরের চৌগাছায় তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গুড় মেলা উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) মেলার শেষ দিনটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
মেলার শেষ দিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল, এবং অনেকেই কম দামে গুড় কিনতে মেলায় আসেন। মেলা প্রাঙ্গণ ছিল দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত গুড় মেলার শেষ দিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি বলেন, খেজুর গুড় নিজস্ব শিল্প। যশোর জেলা খেজুর গুড় ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। আর চৌগাছার মানুষ সেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মেলার আয়োজন করেছে। আমি এই উপজেলারই একজন। এজন্য আমি এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। তিনি বলেন, মেলায় আগত গাছিরা তাদের উৎপাদিত খাঁটি গুড় ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করার জায়গা পেয়েছে। আবার ক্রেতারাও খাঁটি গুড় কিনতে পারছেন। গুড় ক্রেতা ও বিক্রেতার এই ঠিকানা ‘গুড় মেলা’ আরো আকর্ষণীয় করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে যশোরের খেজুর গুড়ের চাহিদা রয়েছে। তবে নির্ভেজাল খেজুর গুড়ের গ্যারান্টি দিতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন গাছি তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি। সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, যশোর থেকে কৃষি পণ্যবাহি বিশেষ ট্র্রেনে দেশের রাজধানীতে যশোরের খেজুর গুড় পৌছানোর ব্যবস্থা করা হবে, যাতে এই জেলার মানুষ খুব সহজেই গুড় ঢাকায় পৌছাতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের উপ- মহাপুলিশ পরিদর্শক রেজাউল হক পিপিএম, যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা।
এসময় অর্থনীতিবীদ ও সাংবাদিক প্রফেসর ড. এম শওকত আলী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম ইদ্রিস সিদ্দিকী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. গোলাম মোরশেদ, সাধারণ সম্পাদক মাও. নুরুজ্জামান, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার কামাল আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার, সাধারন সম্পাদক আব্দুল হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় অংশ নেয়া বিক্রেতারা জানান, এবারের মেলায় বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন তারা। প্রায় সারা দিনই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ছিলেন। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। কেউ কেউ জানিয়েছেন ক্রেতা কম ছিল তাদের স্টলগুলোতে।
তিনদিনব্যাপী মেলায় শ্রেষ্ঠ তিনজন গাছিকে পুরস্কার দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া ১১টি ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ১১ জন গাছিকেও পুরস্কার দিয়েছে। উপজেলার শ্রেষ্ঠ গাছির প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন স্বরুপদাহ ইউনিয়নের সাঞ্চডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। উপজেলা প্রশাসনের তাকে ১০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেছেন। দ্বিতীয় হয়েছেন পাতিবিলা ইউনিয়নের আবুল গাজী। তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার টাকার চেক। তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছেন সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মিজানুর রহমান ।
এছাড়া উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন থেকে মেলায় অংশগ্রহণকারি সকল গাছিদের বিশেষ পুরস্কার দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর আগে ১৫ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। তিনদিনব্যাপী মেলার দর্শানার্থীদের আকর্ষণের জন্য নাটক, আঞ্চলিক খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।