বিশ্বনাথে ব্যবসায়ী থেকে সবজি চাষে সফল কৃষক

বদরুল ইসলাম মহসিন, বিশ্বনাথ (সিলেট)
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৩ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
প্রবাস থেকে দেশে এসে ব্যবসা শুরু করেন, বলছি সফল কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবুল মনছুর খান (৭০) এর কথা। তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেকেও ও সমাজের বেকারত্ব দূরীকরণ উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী আবুল মনছুর খান প্রথমে অনেকটা সখের বসে নিজ বাড়িতে সবজি চাষ শুরু করেন। পরে আস্তে আস্তে সবজি চাষের পাশাপাশি মৌসুমের ধান চাষও শুরু করে তিনি এখন রীতিমতো সফল কৃষক।
সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কজাকাবাদ গ্রামের আবুল মনছুর খান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পৌর শহরের আল-হেরা মার্কেটে উনার কাপড়ের ব্যবসা ছিল। সেখানে তিনি সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি চিন্তা করতে লাগলেন নিজে সবজি চাষ করলে হয়তো বাজার থেকে আর সবজি কেনা লাগবে না। সেই চিন্তা থেকেই তিনি নিজ বাড়ির জঙ্গল পরিষ্কার করে প্রথমে সবজি চাষ করলেন। সবজি চাষে তিনি সফলতা দেখে পরে তাদের পতিত থাকা প্রায় ৩০ কেদার জমিতে কালো জাতের ধান চাষ শুরু করেন। সেখানেও তিনি সফলতা দেখে গত তিন বছর থেকে তিনি ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি কৃষি ক্ষেতে মনোনিবেশন করেন। তার অদম্য আগ্রহ ও ধর্যই তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।
এ বৎসর তিনি তিনি শসা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, পেঁপে, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, কোয়াশ, বাংড়ি, সরিষা, লালশাক, লাইপাতা শাক, কাঁচা মরিচ, বেগুন, কচুর ছড়া, শিমসহ অনেক শাক-সবজির চাষ করেছেন। এছাড়া মালটা, ড্রাগন ফল, ডালিমসহ অসংখ্য ফলাদিও চাষ করেছেন। পাশাপাশি বাড়ির আশপাশ প্রায় ৩০ কেদার পতিত জমিতে মৌসুমি ধান চাষও করে থাকেন। এবারও আমন চাষে বিশাল সাফল্য পেয়েছেন। গত বছর তিনি সারা বছরের খাবারের চাল রেখেও ১৫ লাখ টাকার ধান বিক্রি করেছেন। বিশ্বনাথ একটি প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন। সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এ উপজেলার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে রয়েছেন। তাই অধিকাংশ আত্মীয়স্বজন প্রবাসে থাকায় এ উপজেলার বসবাসকারীরা অনেকটাই কর্মবিমুখ। শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম এড়িয়ে চলেন তারা। যার দরুন বছরের পর বছর ধরে এ এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত পড়ে থাকে। বিশ্বনাথ কৃষি অফিসের তথ্য মতে মোট ফসলি জমি হচ্ছে ১৭,২০৫ হেক্টর। তার মধ্যে সারা বছর পতিত থাকে ১৭৮ হেক্টর জমি। বোর মৌসুমে ৬৫২৫ হেক্টর ও আমন মৌসুমে ৩৫০০ হেক্টর জমি পতিত থাকে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আবুল মনছুর খান জানান, বাড়িতে প্রচুর জায়গা জঙ্গলের মতো পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে সেই জায়গা পরিষ্কার করাই। তার পরে সেখানে সবজি চাষ শুরু করি। সেই বছর সবজি ভালো হওয়ায় আমরা নিজেরা খেয়ে আত্মীয় স্বজনকে দিয়েও পাড়া প্রতিবেশীকে অনেক সবজি দিতে পেরেছি। তার পর থেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে চাষাবাষে মনোনিবেশন করি। আমার সবজি খেত থেকে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়েও অনেক কে দিতে পারায় অনেকটা ভালো লাগে। অন্যকে খাওয়াতে অনেক আনন্দ পাই। এছাড়া আমার জামির ধান সারা বছরের নিজ চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ হয়। তাই আমি বিশ্বনাথের পতিত জমির পাশাপাশি এ এলাকার অনেক বাড়িতে খালি জমি ফেলে না দিয়ে অল্প অল্প করে সবজি চাষ করতে বেকার ভাইদের আহবান জানাই। তাতে আমাদের নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিজ এলাকা ও দেশের উপকার করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি অফিসার কনক চন্দ্র রায় বলেন, আবুল মনছুর খান আমাদের গর্ভ, উনার পাশাপাশি এ উপজেলার অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক সচেষ্ট রয়েছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের বিশেষ গুরুত্বসহকারে কৃষি কাজের যে কোনো পরামর্শ সেবা, নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে প্রদর্শনী স্থাপন, কৃষি বিয়য়ে প্রশিক্ষণপ্রদান এবং কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ বিতরণ করে থাকে। ফসলের ভালো ফলন পেতে সরাসরি পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক অ্যাপস পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া যেখানে পানির উৎস রয়েছে সেখানে সেচ পাম্পসহ প্রয়োজনীয় পাইপ স্থাপনে সহযোগিতা করা হয়। বিশ্বনাথের কৃষি খ্যাতকে আকর্ষণীয় ও লাভজনক করে গড়ে তোলতে বিশ্বনাথ কৃষি অফিস বদ্ধপরিকর।