বিশ্বনাথের শুঁটকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও জনপ্রিয়

বদরুল ইসলাম মহসিন, বিশ্বনাথ (সিলেট)
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম

সিলেটের শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার পর দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
- ছুলাপুটি স্বাদে-ঘ্রাণে অতুলনীয়
- দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
- শুঁটকি বিষমুক্ত হওয়ায়, চাহিদা বেশি
সিলেটি হুটকি (শুঁটকি) আর নাগা মরিছ দিয়া এই মজার খাবারের স্বাদে ভাগ হয় না। শুঁটকি (হুকইন) শিরা খাইতে যেমন স্বাদ তেমনি সুগন্ধিতেও পাগল দেশ ও বিদেশের মানুষ। সিলেটিদের আদি খাবার শুঁটকি। দেশের বিভিন্ন শহরে শুটকির জোল হিসেবে রান্না করা হয়। একসময় শুটকির দাম কম থাকায় গরীবের খাবার হিসেবে ব্যবহার হত। কিন্তু দিনদিন স্বাদ আর গন্ধে- দামের বৃদ্ধির পাশাপাশি বদলেছে অবসান।
ইউরোপসহ লন্ডন, আমেরিকান- ভোজন রশিকদের কাছে খুবই মজার ও নিয়মিত খাবার মেন্যু সিলেটি সিদল ও ছুলাপুটি শুঁটকি। দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশের নামীদামি রেস্টুরেন্টের শুটকির কদর ব্যাপক। সরজমিনে সিলেট বিভাগের একমাত্র শুঁটকির উৎপাদন কেন্দ্র বিশ্বনাথের লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুরে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠছে শুটকির উৎপাদন কারখানা।
এর পাশেই রয়েছে মৎস আড়ত। মাছের আড়ৎকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে শুঁটকি সাফলাইয়ার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি। চতুর্রদিকে ছোট-বড় অনেক ডাঙ্গাইল। শুঁটকি শুকাতে বাঁশ দিয়ে এসব ডাঙ্গাইল বানানো। আর ছোট জাতের শুঁটকি শুকাতে তৈরি হয় মাচান। এসব ডাঙ্গাইলে শুঁটকি উৎপাদন বছরের ৬ মাস হয়। বিশেষ করে মাজারা শুঁটকি হচ্ছে ছুলাপুটি এটি বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় এক নাম্বার। আর গাজরপুটি ইন্ডিয়ানদের খুবই জনপ্রিয়।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের লক্ষ লক্ষ মানুষ বসবাস করেন বিলেতে। আর সেসকল প্রবাসীদের কাছে শুঁটকির কদরই আলাদা। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে সিঁদল, ছুলাপুটিসহ শুঁটকির চাহিদা ব্যাপক। লন্ডনে বসবাসরত স্বজনদের কাছে দেশ থেকে প্রায় সারাবছরই শুঁটকি পাঠিয়ে থাকেন আত্মীয়স্বজনরা। আবার লন্ডন বা আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটী প্রবাসীরা দেশ থেকে যাওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের জন্য শুঁটকি নিয়ে যান।
শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, মাহতাবপুরে প্রায় ৩৫টি ছোট-বড় শুঁটকির ডাঙ্গাইল রয়েছে। তারা শুঁটকি তৈরিতে শুরুতেই কাঁচা মাছ দৌত করে। লবণ প্রক্রিয়াজাত করার পর ২/৩ ঘণ্টা ধরে ডেকে রাখেন। এরপর প্রকর রৌদ্রে এগুলো শুকাতে দেয়া হয়। দীর্ঘ বেশ কিছুদিন ভালো করে শুকানোর পর, ভালো জাত বাচাঁই করে বিক্রির জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে আসা- পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান বিভিন্ন বাজারে।
এ বিষয়ে 'ভোরের কাগজ' এর সঙ্গে কথা হয় মাহতাবপুর শুঁটকি সাফলাইয়ার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহর। তিনি জানান, বছরে ছয় মাস আমরা শুঁটকি ব্যবসায় করি। অল্পদিনের হলেও এটি লাভজনক ব্যবসা। আমাদের শুঁটকিগুলো প্রক্রিয়াজাত করার পর, দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
তিনি আরো বলেন, সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ৎ সিলেট নগরীর মাছিমপুর। সেখানেই শুঁটকি বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে নিয়ে যান ক্রেতা-বিক্রেতারা। মাহতাবপুর শুটকির কারখানায় ব্যবসায়ীরা বছরের ছয়মাস শুঁটকি উৎপাদন করেন। আশপাশ এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী ও পুরুষ শুঁটকি উৎপাদন কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। এসব ডাঙ্গাইলে নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। তারা মাছ কাটা থেকে লবণ ছিটানো ও রোদে শুকানোর কাজ করে। এর বিনিময়ে মাসিক-১৬ হাজার থেকে শুরু করে দৈনিক মজুরি পান ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা।
মির্জারগাওঁ শ্রমিক গিয়াস উদ্দিন ও গৌছ উদ্দিনরা জানান, মাছ কাটার পর লবণ ছিটিয়ে দেয়ার পর রুদে শুকানোর প্রায় ৪ ঘণ্টা পর চাতাল করে বা উঁচু মাটির ডিবিতে রাখা হয়। এখানে পুঁটি, টৈংরা, বাইম, চিংড়ি, চান্দা ও কাইখ্যা এইসব প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়।
পরে সেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারী ধরে বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ীরা শুঁটকিগুলো ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। পুঁটি মাছের শুঁটকি ভারতে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত পুটি শুঁটকির বড় অংশ উৎপাদন হয় সিলেটে।