৩২ বছর ধরে একই অফিসে সরকারি কর্মচারী, দুর্নীতি ও হুমকির অভিযোগ

রবিউল ইসলাম বাবুল. লালমনিরহাট
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম

খালেদা আক্তার রিনা
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী খালেদা আক্তার রিনা দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে একই স্টেশনে বহাল রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হলে বেরিয়ে আসে নানা অনিয়মের চিত্র।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফাইল অনুমোদনের নামে নিয়মিত ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, এমন কোনো ফাইল নেই, যেখানে তিনি টাকা নেন না। টাকা না দিলে কোনো ফাইল অনুমোদন হয় না।
দীর্ঘদিন একইস্থানে কর্মরত থাকার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয়দের অনেকেই জানান, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই তিনি বদলির আদেশগুলোও বাতিল করতে সক্ষম হয়েছেন। তার স্বামী লতিফুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় এবং দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও ক্ষমতার দাপটে তিনি অপ্রতিরোধ্য। স্থানীয়রা মনে করেন, দীর্ঘদিন একইস্থানে দায়িত্ব পালন করায় তিনি দুর্নীতির একচেটিয়া সুযোগ পেয়েছেন। এ নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তার দুর্নীতির তথ্য জানতে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছেন স্থানীয় পত্রিকা যুগের আলো-এর সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সবুজ। অভিযোগ রয়েছে, তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাকে কৌশলে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। পরে, সাক্ষাৎ শেষে একদল দুর্বৃত্ত তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। প্রাণনাশের শঙ্কায় সাংবাদিক সবুজ পাটগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী খালেদা আক্তার রিনার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও উল্লেখ করা হয়। অভিযোগের অনুলিপি লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে খালেদা আক্তার রিনার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার বিষয়ে বলেন, একইস্থানে বেশি দিন চাকরি করা যাবে না, এটা কে বলেছে? মেডিকেলের স্টোর কিপারও দীর্ঘদিন ধরে এখানে কর্মরত। আমি থাকলে সমস্যা কোথায়? তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। যা বলার, স্যার বলবেন। পরবর্তীতে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অজয় দেবব্রত ভোরের কাগজকে বলেন, সাংবাদিক হয়রানির বিষয়টি শুনেছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।