ভিজিডি তালিকায় সচ্ছলদের নাম, অসহায়রা বঞ্চিত

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৭:২১ পিএম

খুলনার কয়রা উপজেলা সদর ইউনিয়নে দুস্থদের জন্য সহায়তা ভিজিডি কার্ডের তালিকায় চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুস্থ নারীদের পরিবর্তে তালিকায় অধিকাংশ সচ্ছল পরিবার। এছাড়া জেলে কার্ড ১০ কেজি চালের কার্ডসহ সরকারি অন্যান্য সহযোগিতা পাওয়া ব্যক্তির ও তালিকায় নাম উঠেছে। এ ব্যাপারে একাধিক দুস্থ্য ২০২১-২২ ভিজিডি চক্রের অনিয়মের প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুস্থ ও অসহায় নারীদের ২০ মাসের খাদ্য নিরাপত্তা জন্য ২০২১-২২ সালের ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৩২৫২টি পরিবারের মাঝে ৯৭.৫০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য (চাল) বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিটি কার্ড এর বিপরীতে মাসিক ৩০ কেজি হারে দুস্থ রা এই চাল পাবেন।
এরমধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নে নয়টি ওয়ার্ডে ৬০৪ টি ভিজিডি কার্ডের অনুকূলে ১৮.১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কয়রা সদর ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ভিজিডি চক্র অনুসরণ না করে দুস্থ ও অসহায় এর পরিবর্তে তালিকায় নাম তুলেছে জমির মালিক, মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, পাকা ঘরের মালিকসহ বিত্তশালীদের নাম। বিষয়টি নিয়ে আম্পান বিধ্বস্ত ইউনিয়নটির জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ইতোমধ্যে এলাকার একাধিক দুস্থ রা ভিজিডি অনিয়মের প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যক্তা হতদরিদ্র হালিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, দিনমজুরের কাজ করে দুইটি শিশু সন্তান নিয়ে সরকারি খাস জায়গার উপর বাস করছি কাজ না হলে সন্তানকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটাতে হয় একটি ভিজিডি কার্ডের জন্য মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে অনেকবার গিয়েছি কান্নাকাটি করেছি তারা দেবে বলেও দিল না। তালিকায় যাদের নাম দিয়েছে তারা সবাই সচ্ছল কারো জমি আছে ঘের আছে। মেম্বার ২০০০ টাকা চেয়েছিল টাকা দিতে না পারায় তালিকায় নাম তুলতে পারিনি বলে কেঁদে ফেলেন।
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুস্থ হতদরিদ্র হাজরা খাতুন বলেন, অসুস্থ স্বামী ও শিশু সন্তান নিয়ে অন্যের জায়গায় ঝুপড়ি বেঁধে কখনো খেয়ে না খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছি, চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে অনেকবার গিয়েছি বসবাসের জন্য একটি ঘরের জন্য, একটু দিনমজুরের কাজের জন্য, কোন তালিকায় নাম তুলতে পারিনি। তারা বলেছিল একটা ভিজিডি কার্ড করে দেবে সেই আশায় অনলাইনে নাম তুলেছিলাম, অনেক আশা করেছিলাম, এবার হয়তো বাদ যাব না। কিন্তু হলো না।
এমন অভিযোগ স্বামী পরিত্যাক্তা শরিফা খাতুনের। তার বৃদ্ধ মাতা হালিমা বেগম বলেন, ছেলেরা আমাদের ফেলে অন্যত্র চলে গেছে। ঘরে তিনটা স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ে স্বামী বৃদ্ধ চলতে পারে না দুবেলা দুমুঠো ভাত ঠিকমত জোগাড় করতে পারি না অনেক হাটাহাটি করেছি তবুও তালিকায় নাম ওঠেনি।
সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যাক্তা মমতাজের অভিযোগ মেম্বার ও স্থানীয় গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) মিলে টাকার বিনিময়ে তাদের নিজেদের লোকজনদের নাম তুলেছে। তালিকায় চৌকিদারের আপন ভাবী, আপন শালিসহ তার অন্তত ৫/৭ জন আত্মীয়ের নাম তুলেছে, তারা সবাই এই গ্রামের সচ্ছল লোক। তাদের ধানের জমি ও ঘের আছে। চৌকিদার আমার কাছে টাকা চেয়েছিল আমি টাকা দিতে পারিনি। তবে গ্রাম পুলিশ আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার আত্মীয়-স্বজনের নাম থাকলেও তারা প্রকৃতপক্ষে দুস্থ।
৭ নং ওয়ার্ডের দুস্থ রুমা খানম ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিরিন সুলতানাসহ ভুক্তভোগীরা তদন্ত পূর্বক সচ্ছল পরিবারের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃত দুস্থদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
সদর ইউনিয়নের নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আখতারুজ্জামান টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তালিকায় আমার দেওয়া নাম গুলো সঠিক, সচ্ছল ব্যক্তির নাম চেয়ারম্যান ও মহিলা মেম্বার দিয়েছে।
কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম হুমায়ুন কবির বলেন, তালিকা ইউপি সদস্যদস্যরা দিয়েছে অনিয়ম হলে খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা ভিজিডি কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তার বলেন এ ব্যাপারে একাধিক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সাথে আলাপ হয়েছে অনিয়ম প্রমাণিত হলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।