আমুর টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে: ডিসি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম

সাবেক এমপি আমির হোসেন আমু। ছবি : সংগৃহীত
বিত্তশালী সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর সাহচর্যে ছোট নেতারাও ফুলেফেঁপে বনে গেছেন কোটিপতি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপী এই নেতার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। তার অর্থবিত্ত দেখাশোনা করা ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরণও আত্মগোপনে।
কিরণের মাধ্যমেই ঠিকাদারি আর চাকরিসহ সব সেক্টর থেকে পার্সেন্টেজ আদায় করতেন আমু। যার সর্বশেষ চালানের পাঁচ কোটি টাকা ৫ আগস্ট রাতে উদ্ধার হয় ঝালকাঠি শহরের রোনালস্ রোডে থাকা সাবেক এই মন্ত্রীর বাসভবন থেকে। ওই ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সরকার পতনের ৩৫ দিনে।
বেপরোয়া এই অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে গত ১৬ বছর ধরে শত শত কোটি টাকা আয় করলেও দেশে আমির হোসেন আমুর তেমন কোনো সম্পদের সন্ধান মেলেনি। ঝালকাঠির রোনালস্ রোডে ভবন, বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে প্রাসাদসম আলীশান বাড়ি এবং রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে বেশ বড়সড় একটি বাগানবাড়ি রয়েছে তার।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর তেমন একটি ভরসা ছিল না তার। অথবা এমনও হতে পারে যে ব্যাংকে গেলে ছিল ধরা পড়ার ভয়। বস্তায় বস্তায় টাকা তিনি রাখতেন বাড়িতে। যার প্রমাণ মেলে ৫ আগস্ট। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই দিন হামলা ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয় তার রোনালস্ রোডের বাড়িতে। ভাঙচুর চলাকালেই বহু মানুষকে দেখা গেছে বাড়ি থেকে বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে বের হতে। তারপরও আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেখান থেকে উদ্ধার করে কয়েক বস্তা ভর্তি টাকা। গোনার পর যার সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ কোটিরও বেশি। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। ঝালকাঠির মতো বরিশাল নগরীতে থাকা আমুর প্রাসাদেও হামলা ভাঙচুর হয় সেদিন। সেখান থেকেও বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে বের হয় হামলাকারীরা।
যার বাড়িতেই থাকে বস্তা বস্তা টাকা সেই মানুষটার দেশে মাত্র তিনটি বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই- ভাবতেই যখন খটকা লাগে ঠিক তখনই আলোচনায় আসে তার পালিত মেয়ে সুমাইয়া হোসেনের নাম। ব্যক্তি জীবনে নিঃসন্তান আমু তার শ্যালিকা মেরী আক্তারের কন্যা এই সুমাইয়াকে পালক হিসেবে নেন আরো বহু বছর আগে। বর্তমানে দুবাইতে থাকা এই সুমাইয়ার বিয়েও হয়েছে দুবাই প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। অবৈধ পন্থায় আয় করা শতকোটি টাকা ওই মেয়ের কাছে পাঠিয়েছেন আমু, এটাই আলোচনা ঝালকাঠি শহরে।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে টাকা পেতেন না আমু। সব টাকাই নগদে পৌঁছাত তার কাছে। লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে কাজ করতেন ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরণ। তিনিও ছিলেন একটি রহস্যময় চরিত্র। শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে আমুর এপিএস ছিলেন তিনি। সর্বশেষ সরকারে আমুকে মন্ত্রী করা না হলেও তার সংস্পর্শেই থেকে যান তিনি। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো আমুর পাশাপাশি সদ্য সাবেক সরকারে দায়িত্ব পালন করা শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনেরও এপিএস ছিলেন কিরণ।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে নলছিটি উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আমুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নিতে হতো কিরণের। উন্নয়নমূলক সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন তিনি। তার কথার বাইরে বলতে গেলে এক পা-ও চলতেন না আমু। পরিস্থিতি এমন ছিল কিরণ যেন ছিলেন আমুর ছায়া। তার মাধ্যমেই নির্বাচনি এলাকা থেকে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন আমু। যার প্রায় পুরোটাই এখন দুবাইতে তার মেয়ে সুমাইয়ার কাছে আছে বলে ধারণা সবার।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, সাবেক এমপির বাসা থেকে পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় আমরা একটি সাধারণ ডায়রি করেছি। টাকা জমা আছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আরো পড়ুন : দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক এমপি আমুর সম্পদ নিয়ে রহস্য