শাজাহান খানের ২৪ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম

শাজাহান খান
বাংলাদেশ
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পরিবহন খাতে
বিশাল পরিমাণ চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত, যার পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০০৮ সালের
নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন, কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ
ক্ষমতায় আসার পর তার আর্থিক অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে।
সরকারের
১৬ বছরের শাসনামলে শাজাহান খান পরিবহন খাতে অলিখিত মাফিয়া হয়ে ওঠেন, যদিও তিনি নিজে
পরিবহন শ্রমিক নন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন নিবন্ধিত যানবাহন থেকে নিয়মিত ৫০ টাকা
করে চাঁদা আদায় করেন। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নিবন্ধিত যানবাহন থেকে চাঁদার পরিমাণ
প্রায় ১৯ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা হয়।
জানা
যায়, ২০০৯-২০১০ সালে ৩ লাখ ৯১ হাজার ২৪৭টি বাণিজ্যিক যানবাহন থেকে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি
টাকা আদায় করা হয়। ২০১১-২০১২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৭০৬টি যানবাহন থেকে
১ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকায় পৌঁছায়। ২০১৩-২০১৪ সালের মধ্যে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৭টি গাড়ি থেকে
২ হাজার ৮০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। এভাবে প্রতি বছর যানবাহনের সংখ্যা ও চাঁদার পরিমাণ
বৃদ্ধি পেতে থাকে।
শাজাহান
খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা, যেমন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী এবং যুগ্ম
সাধারণ সম্পাদক মোকলেছুর রহমান, সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে বেআইনি কার্যক্রম
সম্পাদনা করেন। তারা সরকারের নির্দেশিকার আওতায় মিশুক যানের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে
বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।
শাজাহান
খানের প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে তিনি শ্রমিক কল্যাণের নামে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করেন।
২০০৮ সালে তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল তিনটি স্থানে, কিন্তু বর্তমানে ২০২৪ সালে
তার নিজ নামে স্থাবর সম্পদ ১৫টি স্থানে পৌঁছেছে। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তার সম্পদের
পরিমাণ শতগুণ বেড়ে যায়।
দুর্নীতি
দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক তথ্যে উঠে এসেছে যে, গত ১৫ বছরে শাজাহান খানসহ ক্ষমতাসীন
দলের মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এই
চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির ফলে দেশের জনগণ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, এবং এই অবস্থার
পরিবর্তন করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তিগুলোকে নির্মূল করতে হবে।
ট্রান্সপারেন্সি
ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) গবেষণা অনুযায়ী, সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজে ২৯
হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দলীয় রাজনীতির কাছে এই খাতটি জিম্মি, এবং চাঁদাবাজির বাণিজ্য
মূলত গুটিকয়েক মানুষের জন্য সম্পদশালী হচ্ছে, তবে প্রকৃত মূল্য দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।