সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম ও তার স্ত্রী-ছেলেমেয়ের অবৈধ সম্পদের খোঁজ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে-বেনামে বিগত সময়ে ক্রয়কৃত সম্পদের দলিলপত্র অনুসন্ধান করে অনুলিপি দেয়ার করার জন্য রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশের মাধ্যমে ইকবালুর রহিম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো অবৈধ সম্পদ বা মূল্যবান সম্পদ ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্তের কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর জেলা রেজিস্ট্রার মো. সাজেদুল হক। তিনি জানান, ৬ নভেম্বর বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সদর দপ্তর ঢাকা থেকে একটি নির্দেশপত্র ডাকযোগে প্রাপ্ত হয়েছে, যার ভিত্তিতে অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে।
দুদকের সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে , দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম, তার স্ত্রী নাদিরা সুলতানা, দুই মেয়ে ইশরাক মারজিয়া ও রাইসা মুমতাহিনা এবং এক ছেলে রাফিদুর রহিমের নামে-বেনামে দিনাজপুর সদর ও অন্যান্য উপজেলা গুলোতে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জমি, অবকাঠামো, মিল, কারখানা বা অন্য কোনো মূল্যবান সম্পদ ক্রয় করা হয়ে থাকলে সে সম্পর্কিত দলিলপত্রের অনুলিপি অনুসন্ধান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, দুদক সদর দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশিত পত্র পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দুই জন অফিস সহকারীকে এ অনুসন্ধান কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা বিগত সরকারের সময়ে নির্দেশ অনুযায়ী জেলা রেজিস্টার অফিসে সংরক্ষিত বালাম বহি অনুসন্ধান করবেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য পাওয়া গেলে দুদক সদর দপ্তরে দেয়া হবে।
প্রেরিত পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে নিজ নামে এবং পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ সঞ্চয় করেছেন।
এ বিষয়ের ওপর অনুসন্ধানের জন্য দুদক সদর দপ্তর থেকে একটি ৩ সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের দলনেতা হচ্ছেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক, সদস্য সচিব হিসেবে আছেন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী এবং সদস্য হিসেবে আছেন উপসহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান খান। এই টিমটি বিভিন্ন দিক থেকে অনুসন্ধান করছে এবং এর মধ্যে রয়েছে ইকবালুর রহিম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকা শহরের একাধিক ফ্ল্যাট, বাসা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা দেয়ার তথ্য।
দিনাজপুর সমন্বিত জেলা দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আতাউর রহমান বলেন, এ অনুসন্ধানটি দুদক সদর দপ্তর থেকে চালানো হচ্ছে। যদি অনুসন্ধানের জন্য আমাদের অফিস থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, আমরা তা দিচ্ছি।
সূত্র জানায়, অনুসন্ধানকারী দল গত সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শুরু করে এবং এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংক ও জমির দলিলের তথ্য পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ইকবালুর রহিম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট) সম্পর্কিত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান দল আরও জানায়, তারা ইতিমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে এবং সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তের গতিপথ আরও সুস্পষ্ট হয়েছে। এখনো পর্যন্ত তাদের হাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের পরিবারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কাজ চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, দুদক কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, অনুসন্ধান কাজ শিগগিরই সম্পন্ন হবে এবং এর মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।