×

ঢাকা

গাজীর কারখানায় লুট-অগ্নিসংযোগ

ইন্ধনদাতারা চিহ্নিত হয়নি হতাশায় ১৫ হাজার শ্রমিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইন্ধনদাতারা চিহ্নিত হয়নি হতাশায় ১৫ হাজার শ্রমিক

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুপুর থেকেই লুটপাট শুরু হয়। ছবি : সংগৃহীত

   

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী গ্রুপের টায়ার, পাইপ, ট্যাংকি ও পাম্প তৈরি কারখানায় দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা এখনো রহস্যঘেরা। কারা কার ইন্ধনে লুটপাট চালিয়ে আগুন দিয়েছে এবং হতাহত ব্যক্তিরা কারা- সে প্রশ্নেরও স্পষ্ট জবাব মিলছে না। গাজী গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারখানা বন্ধ থাকায় সেখানে কোনো শ্রমিক ছিল না। দুর্বৃত্তদের দুটি গ্রুপ লুটপাট করতে গেলে বিরোধ বাঁধে। এক গ্রুপ লুটপাট শেষে বের হয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে থাকা আরেক গ্রুপ আটকা পড়ে। আগুনের ঘটনায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি কারখানার ভেতরে আটকা ছিল; স্বজনরা এমন দাবি করলেও তাদের শেষ পরিণতি এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। আবার এসব কারখানায় আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময় পেরোলেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান। লুটপাট ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম সেদিকে নজরদারি করছে। লুটপাট করতে যাওয়া ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পুড়ে যাওয়া গাজী গ্রুপের ওইসব কারখানায় সবমিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর কারখানা বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি কারাগারে আছেন। এর ফলে নতুন করে উৎপাদনে আসার অবস্থায় নেই এসব কারখানা। এতে বেকার হয়ে পড়া ১৫ হাজার শ্রমিকের পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা, দুশ্চিন্তা। কীভাবে তাদের সংসার চলবে, জীবকা নির্বাহ হবে, কীভাবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

স্থানীয়রা জানান, রূপগঞ্জের রূপসী ও বরাবো এলাকায় গাজী গ্রুপের কারখানাগুলো গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুপুর থেকেই লুটপাট শুরু হয়। দফায় দফায় তা চলে। সন্ধ্যার পর এসব কারখানায় আগুন দেয়া হয়। বৃহৎ আকারের কারখানার একদিকে আগুন দিয়ে অন্যদিকে চলে লুটপাট। যে যেভাবে পেরেছে সেভাবে লুটতরাজ চালিয়েছে। ৫ আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে লুটপাট চলে। এর মধ্যে গাজী টায়ার কারখানা কিছুটা সারিয়ে উঠে উৎপাদনের চেষ্টা করলে ২৫ আগস্ট নতুন করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। যে আগুন জ¦লে টানা ৩২ ঘণ্টা ধরে। গাজী গ্রুপের দাবি, ৫ আগস্টের পর থেকেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে পারেনি। এর মধ্যে ৬ আগস্ট থেকে জুলাই মাসের বেতন দেয়া শুরু হয়।

জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কারখানার নিরাপত্তায় কাজ করছে। পোড়া ভবনে লোহার যন্ত্রাংশ লুট করতে যাওয়া লোকজনকে তারা আটক করছে। ৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ২৫ আগস্ট লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর ফের হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। রবিবার বিকাল থেকে আবারো রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানার বিভিন্ন মালামাল লুট করা শুরু হয়। এ সময় ৭ জনকে আটক করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রূপগঞ্জের পাড়াগাঁও এলাকার মোতাবর হোসেনের ছেলে আব্দুস সাত্তার (২২), খাদুন এলাকার ফজলুল হকের ছেলে খোরশেদ আলম (২১), তাদির ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম (২৫), আতাবর রহমানের ছেলে মাহবুব হোসেন (৩৫), তারাব এলাকার আলেব শেখের ছেলে সিরাজ (৩২), মোগড়াকুল এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মোতালিব (৪৮) ও আব্দুর রশিদের ছেলে সুমন (৩০)। গত সোমবার আরো ১০ জনকে আটক করে দণ্ড দেয়া হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম কারখানা থেকে লুটপাট করার সময় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে ৪০ থেকে ৫০ জন দুর্বৃত্ত গাজী টায়ার কারখানায় প্রবেশ করে লোহার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ লুট করতে থাকে। পরে তারা কারখানার ভেতরে ওয়েস্টেজ সেকশনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর আগে গত ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ার কারখানায় রহস্যজনকভাবে আগুন লাগে। দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কথা জানালেও ফের দফায় দফায় ভবনটিতে আগুন জ¦লে ওঠে। এই অবস্থায় কারখানাটিতে চলে লুটপাট। মূলত কারখানার মালামাল লুটপাটকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থেকে ভবনে আগুন দেয়া হয় বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

প্রসঙ্গত, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ড্রোন ক্যামেরা ও মই ব্যবহার করে কোনো মৃতদেহের আলামত পায়নি বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। পরে ভবনের নিচের বেসমেন্টে তল্লাশি চালিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানায় তারা। ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ফ্লোর ধসে পড়ায় তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে উদ্ধারকাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) টিম। জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম ১ সেপ্টেম্বর বিকালে গণশুনানি শেষে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ৭৮ জনের তালিকা সংগ্রহ করেছে। ওই দিন বিকালে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা আগুনে পুড়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রবেশ করে মাথার খুলি ও হাড়ের টুকরো পেয়েছেন বলে দাবি করেন। উদ্ধার হওয়া হাড়গুলো পুলিশের কাছে জমা দেয়া হয়। তবে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বজনদের দাবি অনুযায়ী ১৭৪ জন নিখোঁজের তালিকা করে ফায়ার সার্ভিস। পরে নিখোঁজের তালিকা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলে শিক্ষার্থীরা ফের নতুন করে ১২১ জনের তালিকা করে। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম করা হয়। এই ঘটনায় ২৭ আগস্ট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বললেও সেই সময় শেষ হয়েছে রবিবার। নির্দিষ্ট সময় পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি কমিটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App