×

ঢাকা

নারায়ণগঞ্জে বেপরোয়া অটোরিকশা

যানজটে নাকাল নগরবাসী

Icon

মো. সাইফুল ইসলাম সায়েম, নারায়ণগঞ্জ থেকে

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যানজটে নাকাল নগরবাসী

ছবি : ভোরের কাগজ

   

শহরে অবৈধ অটোরিকশার দাপটে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। প্রধান সড়কগুলোতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা মিশুকের দাপটে দিশাহারা শহরবাসী। এসব বাহনের লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালকদের কারণে তীব্র যানজটের পাশাপাশি প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যানজটমুক্ত শহর গড়তে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের নানা পদক্ষেপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। অবৈধ এসব যানবাহনের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে শহরের ট্রাফিক পুলিশ। দিন দিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) নগরীতে পরিণত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ।

নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি, পাড়া-মহল্লা সবখানেই চলছে ব্যাটারিচালিত অনুমোদনহীন পরিবহন। শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়ক নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়ক। শহর থেকে বের হওয়ার আরেকটি সড়ক হলো ১ নম্বর রেল গেইট থেকে মেট্রোহলের মোড় পর্যন্ত। উভয় সড়কেই প্রতিদিন বৈধ-অবৈধ প্রায় ৮ হাজার রিকশা ও মিশুকের পাশাপাশি অন্তত ২৫ হাজার ইজিবাইক-অটোরিকশা প্রবেশ করে। শহরজুড়ে অবৈধ ইজিবাইক, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের দৌরাত্ম্যে ভয়াবহ যানজট কিছুতেই কমছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা। পাঁচ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লেগে যাচ্ছে এক ঘণ্টা। এছাড়া রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তার স্বজনদের। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, চাষাঢ়া-সিদ্ধিরগঞ্জ ও চাষাঢ়া-পাগলা সড়কগুলোতেও এসব যানবাহনের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

নাসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর শহর অঞ্চল, সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চল ও বন্দর (কদমরসূল) অঞ্চলে ১৭ হাজার পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। গত বছর সিটি করপোরেশনের এক সভায় পায়ে চালিত এসব রিকশার পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত মিশুকের লাইসেন্স দেয়ার পাশাপাশি পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্সও নবায়ন করা যাবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এই কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার রিকশা ও মিশুকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে।

এদিকে শহরে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচলে আগে থেকেই বিধিনিষেধ ছিল। পাশাপাশি সরকার পরিবর্তনের পর নতুন পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারের নির্দেশে এসব বাহনের চালকদের ডেকে শহরে প্রবেশ না করার আহ্বানও জানানো হয়েছি। তবে, তাদের এ আহ্বানকে অনেকটা প্রত্যাখ্যান করে এসব বাহন প্রতিদিন নগরীতে প্রবেশ করে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করছে। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যানজট নিরসন ও অটোরিকশার দৌরাত্ম প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিআরটিএর নেতৃত্বে ৬-৭ বার যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়েছে। প্রতিটি অভিযানেই সংস্থাগুলো একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধ এসব বাহন, সিএনজি, অনুমোদনহীন বাসসহ বিভিন্ন পরিবহন আটক করে এবং ৫ শতাধিক মামলাও দেয়। পাশাপাশি চার শতাধিক অটোরিকশা-ইজিবাইক-সিএনজি জব্দ করে সাত দিন পর্যন্ত ডাম্পিংয়ে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে আর শহরে প্রবেশ করবে না- এমন শর্ত দিয়ে সাত দিন পর তাদের ছেড়ে দেয়া হলেও পুনরায় তারা শহরে প্রবেশ করে যানজটের সৃষ্টি করে।

এছাড়া, অবৈধ এসব বাহনের কারণে নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। শহরের উত্তর চাষাঢ়ার মোড়ে সুগন্ধা বেকারির সামনে প্রধান সড়ক, ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় রেললাইনের উপরে ও মনির হোটেলের সামনে চাষাঢ়ায় যাওয়ার প্রধান সড়ক, দিগু বাবুর বাজারের মোড় ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে প্রধান সড়ক, কালির বাজার এলাকায় মন্দিরের সামনে প্রধান সড়ক, জিমখানায় বাবুরাইল সড়ক, গলাচিপা মোড়, মূল সড়কের ওপর মিশুক-ইজিবাইকের অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্থানে বিশৃঙ্খলভাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শত শত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে কোনো যানবাহন তো দূরের কথা মানুষ চলাচলেরও সুযোগ থাকছে না।

নগরীর দেওভোগের বাসিন্দা আকাশ বলেন, এসব ক্ষুদ্র যান মানুষের চলাচলে সহায়ক হিসেবে কাজ করলেও অদক্ষ, বেপরোয়া চালকদের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে এসব যানের হর্নের কারণেও ভোগান্তি হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর ভোরের কাগজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে ৫টি সংস্থাকে নিয়ে ইতোমধ্যেই আমরা বেশ কয়েকবার যৌথ অভিযান চালিয়েছি। অবৈধ এসব বাহনসহ অনুমোদনহীন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন আটক করেছি, মামলা দিয়েছি, ডাম্পিংয়ে দিয়েছি। তারপরও এসব বাহনের দৌরাত্ম্য কমানো যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা অবৈধ এসব পরিবহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে তারা আমাদের কার্যালয়ের সামনে এসে বিক্ষোভ করে। তখন অন্য কোনো সংস্থা এগিয়ে আসে না, কেবল আমাদেরই লড়াই করতে হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখনো পর্যন্ত ৫-৭ বার এসব বাহনের চালকরা আমাদের কার্যালয় ঘেরাও করেছে। সব সংস্থার সমন্বয় এবং শহরবাসীর সচেতন হওয়া ছাড়া অটোরিকশার দৌরাত্ম্য প্রতিরোধ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, অটোরিকশা-ইজিবাইক যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে এ ব্যাপারে আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। নিয়মিত জরিমানা ও গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। এমনকি সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিআরটিএকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকদিন যৌথ অভিযান চালিয়েছি। জব্দ ও ডাম্পিংয়ে দিলে আর শহরে প্রবেশ করবে না বলে প্রতিশ্রæতি দিয়ে ৭ দিন পর বাহনগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় আবারো তারা অবাধে শহরে ঢুকে যানজটের সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতি মাসেই সভাও অনুষ্ঠিত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App